ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে শিল্পকর্ম আঁকছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। মোরা আকাশের মতো বাধাহীন, সুবোধ তুই ফিরে আয়, ভোর হয়ে গেছে, সংস্কার, গড়বো বাংলাদেশ এমন নানান উক্তি আর বিভিন্ন চিত্র শৈলীতে বর্ণিল হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহ নগরী।
রবিবার (১১ আগস্ট) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ দেয়াল ঘষে পরিষ্কার করছেন, কেউবা সেখানে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। কেউবা সেই প্রলেপ দেওয়া জায়গায় আঁকছেন লাল-সবুজের পতাকা। কেউ আবার ব্যস্ত স্লোগান লেখায়। শত শত শিক্ষার্থীর এ রকম ব্যস্ততা নগরীজুড়ে। নগরীর টাউন হল মোড়, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, মুসলিম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ দেয়াল রংতুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে। ২০ থেকে ২৫টি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আঁকাআঁকির কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। এমন দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি লিখনে চোখ জুড়ে যায় নগরবাসীর। একটা সময় এসব দেয়ালে বিভিন্ন পণ্যের বাহারি বিজ্ঞাপনের পসরা ছিলো। তার পরিবর্তে আজ সেখানে শিক্ষার্থীদের রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন চিত্র আর সমাজ সংস্কারমূলক উক্তি। শিক্ষার্থীরা অভিভাবকের কাজ থেকে ও নিজেদের মধ্য হতে চাঁদা তুলে এসব গ্রাফিতির অর্থের জোগান দিচ্ছেন। আর শিক্ষার্থীদের এমন কাজকর্মের সাধুবাদ জানিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের সারথি হতে যাচ্ছেন এমন প্রত্যাশা তাদের।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশটাকে আমরা রঙিন করে সাজাতে চাই। দেশের বিরত্বগাঁথা ইতিহাস দিয়ে ভরে ফেলতে চাই দেয়ালগুলো। নগরীর বিভিন্ন যায়গায় আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, দেয়ালে গ্রাফিতির দ্বারা বার্তা পৌঁছে দিতে চাচ্ছি সকলের কাছে, দেশটাকে যেন নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারি।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, আমাদের সন্তানদের এমন উদ্যম দেখে আমরাও অনুপ্রেরণা পেয়েছি, তাই সন্তানদের পাশে থেকে সহযোগিতা করছি। এতে করে তারা দ্বিগুণ মনোবল পেয়ে একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে পারবে।
নগরীর মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক সামসুদ্দিন সাইদ বলেন, শিক্ষার্থীরা জাতী গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা প্রশংসনীয়। তারা যে ইতিহাস রচনা করেছে, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে যে বার্তা পৌঁছে দিতে চাচ্ছে, তা ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নগরীর গ্রাফিতি শিল্পী শামীম আশরাফ বলেন, গ্রাফিতি হচ্ছে অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করার অন্যতম শক্তি। পৃথিবীর সব থেকে বড় শিল্পের প্রতিবাদ হচ্ছে গ্রাফিতি। আর এর ভেতর দিয়ে একজন শিল্পী তার প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলতে পারে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আকা আঁকা যে সব দেয়াল চিত্র দেখা যাচ্ছে, সেখানে এতো সুন্দর কথা লিখা আছে, তা যে কারো চিন্তাকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।
এইচএ