ফেব্রুয়ারি মাস এলেই যেন শহীদ মিনারগুলোর কদর বেড়ে যায়। বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারি এলে শুরু হয় ধোঁয়া-মোছাসহ নতুন শহীদ মিনার তৈরির কাজ। ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর হলেও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ২০৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্য ১৭১ টি প্রতিষ্ঠানের নেই স্থায়ী কোন শহীদ মিনার। মহান ভাষা দিবসের দিন উপজেলার হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অস্থায়ীভাবে কলাগাছ ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে কলাগাছ ও বাঁশের কঞ্চি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি না করেও শিক্ষার্থীরা ফুল দিতে যায় দূরের কোনো শহীদ মিনারে। যেসব প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার আছে, সেগুলো সারা বছর পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুসারে, পাথরঘাটায় ১৪৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩টিতে আছে স্থায়ী শহীদ মিনার আর বাকি ১৪৬টিতে নেই। একইভাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলার শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৪টি। ২৯ টি স্কুল, ১৮টি মাদ্রাসা ও ৭ টি কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার আছে ২৯ টি, নেই ২৫ টি প্রতিষ্ঠানে ।
শিক্ষার্থীরা জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আসলে তারা বাঁশের কঞ্চি কিংবা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালন করেন। তাদের দাবি স্কুলে স্থায়ী শহীদ মিনারের ।
চরটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিবস। প্রতিবছর ভাষা শহীদদের স্বরণে দিবসটি পালন করা হয়। তবে অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার হলো, ভাষা আন্দোলনের বাহাত্তর বছর পরেও প্রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। কলাগাছ, বাঁশির কঞ্চি দিয়ে কচিকাঁচা ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা মিলে প্রতি বছর অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে থাকি। যথাযথ ভাবে শহীদদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি না। অথচ শহীদদের স্মরণ করার জন্যেই এ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। বর্তমানে দেশ সংস্কারের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটা করে শহীদ মিনার তৈরির জন্য একজন শিক্ষক হিসেবে অনুরোধ করবো।
পাথরঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুল ইসলামের বলেন, সরকারি বরাদ্দ না থাকার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না, আমি এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। যেসব স্কুলের স্থায়ী শহীদ মিনার নেই, সেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী শহীদ মিনার করার জন্য ৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হয়েছে।
এমআর-২