রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন কয়েরদাড়া এলাকায় পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় জীবন-মরণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন একদল জমির ওয়ারিশ। জমি দখলের পাঁয়তারা, প্রাণনাশের হুমকি এবং মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে তাঁরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় কয়েরদাড়ায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা, ভয়ভীতির অভিজ্ঞতা এবং বিচারপ্রার্থনার চিত্র তুলে ধরেন। তারা অভিযোগ করেন, একটি প্রভাবশালী দখলবাজ চক্র তাদের জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রতিবাদ করায় তাঁরা প্রতিনিয়ত হুমকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সপুরা মৌজার আর.এস খতিয়ান নম্বর ৩১০ এবং আর.এস দাগ নম্বর ২৫ অনুযায়ী ০.৩৭৩৭ একর জমির বৈধ মালিক তারা। পূর্বপুরুষ মো. আরমান আলী, মো. মহরম আলী, মো. জুলমত আলী এবং মো. আব্দুর রশিদের ওয়ারিশ হিসেবে বর্তমানে জমির মালিকানা দাবি করছেন মো. রফিকুল ইসলাম বজলু, মো. ফারুক, মো. লালচান, মো. বাচ্চু, মো. মহসিন আলী, মো. জাহাঙ্গীর এবং মো. রিপন।
“আমরা কেউই জমি হস্তান্তর বা বিক্রি করিনি। অথচ একজন ব্যক্তি ও তার বাহিনী আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে,” বলেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মো. জুলমত আলী।
ভুক্তভোগীরা জানান, জমিতে প্রবেশ করে কাজ করতে গেলে একাধিকবার বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি গত বছর পহেলা এপ্রিল আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কয়েরদাঁড়ার মৃত আবুল খায়েরের ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম দলবল নিয়ে জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করেন। তিনি এবং তার ভাড়াটে গুন্ডারা ওয়ারিশগণকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।
তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে পবা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা (নং ৩৫৬/২০২৩) দায়ের করা হয়েছে, যা বর্তমানে চলমান।
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় জমিতে অনুপ্রবেশ ও দখলের চেষ্টা “আদালত অবমাননার” শামিল। এ ধরনের কাজ ফৌজদারি শাস্তির আওতায়ও আসতে পারে।
একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, “আইনের চোখে এমন কাজ গুরুতর অপরাধ। আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
এলাকার কিছু বাসিন্দা জানান, শফিকুল ইসলাম এর আগেও জমি দখলের ঘটনায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে তিনি বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও ক্ষোভ দুই-ই তৈরি হয়েছে। “প্রশাসন কিছুই করছে না, শুধু অভিযোগ নিলেই তো হয় না, ব্যবস্থা কোথায়?”—বললেন এক স্থানীয় বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে মো. রফিকুল ইসলাম বজলু এবং ওয়ারিশগণ দাবি করেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, জমির বৈধতা রক্ষা করতে হবে এবং মিথ্যা মামলার হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন, যেন প্রভাবশালী চক্রের দাপটে তারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হন। “আমাদের জমি ফেরত চাই, ন্যায়বিচার চাই। আমরা আইনের বাইরে কিছু করিনি, করবোও না,”—বলেন মো. বাচ্চু।
সপুরার এই জমি দখল ও হুমকির ঘটনা শুধু একটি পারিবারিক বিরোধ নয়; এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা, জমি সংরক্ষণ এবং সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তোলে। প্রশাসন ও আদালতের সক্রিয় হস্তক্ষেপ না হলে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে এবং সাধারণ মানুষ আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়বে।
এমআর