বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে. এম. সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদী হয়ে ১০ জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে এই জিডি করেন।
ছাত্রদলের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও জিডির ৭ নম্বর অভিযুক্ত এম. ডি শিহাব বলেন, “যৌক্তিক আন্দোলনকে দমন করতে এবং শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সাধারণ ডায়েরি করেছে। আমরা এই ঘৃণিত পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাই।”
জিডিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন —
ইংরেজি বিভাগের রাকিন খান, সাংবাদিকতা বিভাগের নাজমুল ঢালী, লোক প্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, আইন বিভাগের তরিক হোসেন, ইংরেজি বিভাগের মিজানুর রহমান, ইংরেজি বিভাগের এনামুল হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এম. ডি. শিহাব, ইংরেজি বিভাগের তরিকুল ইসলাম, কোস্টাল স্টাডিজ বিভাগের স্বপ্নীল অপূর্ব রকি এবং রসায়ন বিভাগের রফিক। এছাড়া আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এর আগে, রবিবার রেজিস্ট্রারের অপসারণের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ করে এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, বর্তমান রেজিস্ট্রার ফ্যাসিস্টদের সহযোগী এবং ভোলার মনপুরা উপজেলার আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া, অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে ১৩ এপ্রিল সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা চার দফা দাবি জানিয়ে সময়সীমা নির্ধারণ করেন।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন তার পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন, কিন্তু আদালত রিটটি আমলে না নিয়ে খারিজ করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, “আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়। স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমন করতে প্রশাসন মামলা ও জিডির পথ নিয়েছে। তবে মামলা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সাধারণ ডায়েরি করেন।”
সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে এবং অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দলবদ্ধভাবে চলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করছে এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্লোগান ও ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান করছে। একপর্যায়ে রেজিস্ট্রারের কক্ষে প্রবেশ করে কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দিয়ে কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়।
ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “হামলা-মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দমন করা যাবে না। খুনি হাসিনা যেভাবে বিরোধী মত দমন করতে চেয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেই একই পথে হাঁটছে। স্বৈরাচারবিরোধী এই আন্দোলন চলবে।”
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু প্রশাসন কণ্ঠরোধ করতে জিডি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছে। পূর্বের মিথ্যা মামলাগুলোর এখনও নিষ্পত্তি হয়নি বলেও তারা জানান।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের কাছে আপাতত ১০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সনি বলেন, “আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দেখেছি, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এইচএ