ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় চলিত বছরের এপ্রিল মাসজুড়ে একাধিক ভয়াবহ অপরাধ সাধারণ মানুষের মনে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। অপহরণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও প্রাণঘাতী সংঘর্ষ—সব মিলিয়ে পুরো উপজেলা যেন এক অনিয়ন্ত্রিত অপরাধপ্রবণতায় ডুবে গেছে।
গেলো ৪ এপ্রিল জিনোদপুর ইউনিয়নে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। শুরুতে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে সাহস করে নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করলে শুরু হয় হুমকি-ধামকি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ,অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে তাকে মামলা তুলে নিতে দেওয়া হয় খুন ও গুমের হুমকি। এরপর ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে তাকে হেয় করার অপচেষ্টা চলে। পরিস্থিতির চাপে তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন এবং ফিরতে পারছেন না নিজের ঘরে।
সম্প্রতি ৭ এপ্রিল রাতে উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রামে ঘটে এক চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনা। সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালুর ১৯ বছর বয়সী ছেলে রিফাত মিয়াকে কয়েকজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি নিজেদের ‘ডিজিএফআই সদস্য’ পরিচয়ে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যায়—তা-ও পুলিশের উপস্থিতিতে। পরদিন যৌথ বাহিনীর অভিযানে অপহৃত রিফাতকে উদ্ধার করা হয় এবং ঘটনায় জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে অপহরণের সাথে জড়িত আরো দুইজন এখনও অধরাই থেকে যাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠছে এতবড় ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে।
২৯ এপ্রিল সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা ও বাড়াইল গ্রামের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণ হারান আজিজ মিয়া (৫২)। আহত হন অন্তত ২০ জন। এর সূত্রপাত ঘটে ৩ এপ্রিল, যখন সলিমগঞ্জ বাজারে বাড্ডা গ্রামের যুবক ইসাক মিয়ার সঙ্গে এক দোকানদারের টাকা ভাঙতি নিয়ে বিবাদ বাধে।
ওই ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় বাড্ডা গ্রামের লোকজন বাড়াইল গ্রামের ছোট্ট মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যাতে প্রথম দফায় ১০ জন আহত হন। পরে ২৯ এপ্রিল ফের সংঘর্ষে জড়ালে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আজিজ মিয়াকে। ঘটনাস্থলে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “প্রতিটি ঘটনার তদন্ত পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করেছে এবং সংশ্লিষ্ট আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সবসময় সতর্ক ও সজাগ রয়েছে।”
এপ্রিল মাসজুড়ে ঘটে যাওয়া এসব চাঞ্চল্যকর ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে,আইনশৃঙ্খলা এখন হুমকির মুখে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, অপরাধীরা বেপরোয়া। সময় থাকতেই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এই অপরাধপ্রবণতা রোধ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এমআর