এইমাত্র
  • পুরো আইপিএলের জন্য এনওসি পাবে মুস্তাফিজ, তবে
  • নভেম্বরে ৫৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৮৩ ও আহত ১৩১৭ জন
  • ছয় মাসের মাথায় চাকরি হারালেন আনচেলত্তি
  • নিকুঞ্জের সামনে ট্রাক উল্টে এয়ারপোর্ট রোডে তীব্র যানজট
  • রাজধানী থেকে এনসিপি নেত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  • খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে ব্রিফিং করবেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক
  • ভারতীয় ভিসা সেন্টার চালু
  • মানবতাবিরোধী অপরাধে ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল
  • যেসব এলাকায় আজ টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না
  • মালয়েশিয়ার অভিযানে ৭২ বাংলাদেশিসহ আটক ৪০২ জন
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ, ১৪৩২ | ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    পিআইও-ঠিকাদারের তামাশা, আটকে আছে দুই গ্রামের স্বপ্ন

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১০:২৫ পিএম
    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১০:২৫ পিএম

    পিআইও-ঠিকাদারের তামাশা, আটকে আছে দুই গ্রামের স্বপ্ন

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১০:২৫ পিএম

    চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাঞ্চনা হাজারিখীল বুড়াইছড়ি খালের উপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রীজ—শুধু একটি অবকাঠামো নয়; দুই গ্রামের হাজারো মানুষের স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন এখন গড়িমসির ফাঁদে আটকে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা আর ঠিকাদারের খামখেয়ালি, তামাশা ও অবহেলায় আটকে আছে কাজ। দুর্ভোগে ছারখার জনজীবন।

    উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন ও ঠিকাদার মোহাম্মদ ফারুক—এই দুইজনের দ্বৈত নাটকীয়তা আজ এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সরকারি প্রকল্প হলেও কাজ চলছে না। বরং চলছে কথার খেলাপ, অজুহাতের পালা আর জনগণকে নিয়ে তামাশা।

    স্থানীয়দের ভাষ্য, ক্ষমতার আশ্রয়ে ব্রীজ নির্মাণে পরিকল্পিত বিলম্ব করছেন ঠিকাদার ফারুক। তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আফছানা এন্টারপ্রাইজ নামে থাকলেও কাজে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। খালে কৃষিকাজের জন্য তৈরি বাঁধের পানি দুই মাস আগে ছাড়ার পরও গত এক মাসে কাজ শুরু হয়নি। অথচ গত সপ্তাহে তিনি নিজেই বলেছিলেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করব।”

    কথা দিয়েই ক্ষান্ত নন তিনি। কাজ তো দূরের কথা, ঘটনাস্থলে এসে দেখারও প্রয়োজনবোধ করেননি। পিআইও কামরুল হোসাইনও একই পথে। একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন এড়িয়ে যাওয়া—প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসীর মনে।

    ঠিকাদারের অজুহাতের ফিরিস্তি দীর্ঘ। কখনো তিনি অসুস্থ, কখনো কাজের সাব-ঠিকাদার পালিয়ে গেছে, কখনো নির্মাণ সামগ্রী নেই, আবার কখনো খালের পানি শুকায়নি—এভাবেই চলছে ‘গায়েবি অজুহাতের মিছিল’।

    ঠিকাদার ফারুকের হাবভাব দেখে মনে হয়, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে। ব্রীজ নির্মাণের ধীরগতির বিষয়ে তিনদিনের মধ্যে জবাব চেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত নোটিশ গেলেও ফারুক তা অস্বীকার করে বলেন, “এমন কোনো নোটিশ আমি পাইনি। আমার হাতে পাঁচ বছর সময় আছে। এখন আপনাদের কথায় কাজ শুরু করব না।”

    স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বললেন, “পিআইও আর ঠিকাদার মিলে এলাকাবাসীকে নিয়ে চরম তামাশা করছে। আমরা মাঠে ধান শুকাই, তারা বলে কাজের পরিবেশ হয়নি। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দেখলে ওদের শান্তি লাগে।”

    স্থানীয় বাসিন্দা জুবাইর বিন জিহাদী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “এটা পরিকল্পিত বিলম্ব। ঠিকাদার যদি কাজ না করে, তার লাইসেন্স বাতিল করে নতুন টেন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।”

    ব্রিটিশ আমল থেকে এই খালের উপর বাঁশের সাঁকো দিয়েই পার হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করেন শত শত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মুসল্লি ও সাধারণ পথচারীরা। গত এক বছরে অন্তত ১১ জন সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছেন—এমন তথ্য মিলেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। মৃতদেহ জানাজা-মাঠে নিতে গেলেও ঘটে দুর্ভোগ।

    এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেছেন, “আগামী সোমবারের মধ্যে ঠিকাদারকে ডেকে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা—কথার আশ্বাস যেন আবারও ‘খালি বুলি’ হয়ে না থাকে। প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ ছাড়া এই দুর্ভোগের অবসান নেই। এলাকাবাসীর স্পষ্ট প্রশ্ন—উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর ও ঠিকাদারের অজুহাতের এই নাটকীয়তার নেপথ্যে আসলে কারা আছেন? আর কতকাল আটকে থাকবে কাঞ্চনার স্বপ্নের ব্রীজ?

    এফএস

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…