পাবনার ঈশ্বরদী লিচুর রাজ্যে হিসেবে বেশ পরিচিত। এই অঞ্চলের রসালো লিচুর খ্যাতিও রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতিবছর এই সময় লিচু চাষীদের কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে ওঠে ঈশ্বরদীর লিচু আবাদকৃত এলাকা। তবে এ বছর লিচুর ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের কারণে কোন কর্ব্যমস্ততায় নেই এ লিচুর রাজ্যে। ফলে ভালো ফলন পাবার আশায় অগ্রিম বাগান কেনা চাষীদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাজ। এদিকে কিছু কিছু বাগানে যে পরিমান দেশি জাতের লিচু হয়েছে তা বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব অবস্থায় বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ঈশ্বরদীর হাট-বাজার অপরিপক্ব, টক ও স্বাদহীন লিচুতে এখন সয়লাভ।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর গাছ রয়েছে। তার মধ্যে এ বছর মাত্র ৪০% গাছে লিচু এসেছে। যা অন্যবারের তুলনায় এবার ফলন অনেকটাই কম। লিচুর জাতের মধ্যে রয়েছে মোজাফ্ফর (দেশি), বোম্বাই ও চায়না। ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, সিলিমপুর, সাহাপুর, রূপপুর, বক্তারপুর, জয়নগর, চররূপপুর, তিনগাছা, বাঁশেরবাদা গ্রামে লিচুর বাগানগুলোতে লিচুর বদলে গাছ গুলো কেবল সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকতে দেখা গেছে।
চাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ১০ ভাগের এক ভাগও লিচুর ফলন হয়নি। বাগান থেকে কৃষকদের হাত থেকে পাইকারি প্রতি হাজার দেশি জাতের লিচু(মোজাফফর) বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে যা খুচরা পর্যায়ে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা 'শ' বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গত দুদিন আগে থেকে স্বল্প পরিসরে বিক্রি শুরু হয়েছে বোম্বাই জাতের লিচু যা বাগান থেকে পাইকারি ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আজকের বাজারে এ জাতের লিচু খুচরা ৪৩০ থেকে ৪৬০ টাকা 'শ' বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক পরেই পুরোপুরি বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হবে বোম্বাই জাতের লিচু। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর দাম বেশি।
ঈশ্বরদীর বাশেরবাদা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ৬০ বছরের জীবনে এত কম লিচু দেখিনি। যতটুকু ফলন এসেছে তাতে লাভের মুখ দেখা দুঃসাধ্য ব্যাপার। আওতাপাড়া গ্রামের চাষি টুটুল হোসেন বলেন, দাশুড়িয়া থেকে রূপপুর যাওয়ার রাস্তার দুই পাশের বাগানগুলোতে কিছু কিছু লিচু দেখা যায়। প্রতিবছর এ সময় বাহিরে থেকে শ্রমিক এনে লিচু ভাঙ্গার কাজ করাতে হতো কিন্তু এ বছর বাগানে বসে হাওয়া খেতে হচ্ছে।
উপজেলার শিমুলতলা হাঁটের পাইকারি ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, এ বছর লিচুর ফলন কম যার কারণে দামটা অনেক বেশি। প্রতিহাজারে গত বছরের তুলনায় ছয় থেকে সাতশত টাকা বেশি দামে লিচু বেচাকেনা হচ্ছে। পৌর শহরের বাজারে ফল ব্যবসায়ী আলমাস আলী বলেন, লিচুর দাম বেশি যার কারণে ভোক্তা চাহিদা কম। তাতে লাভ করাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে লিচু আর বিক্রি করবনা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈরি আবহাওয়া ও পরাগায়নের জটিলতার কারণে এবার লিচুর ফলন অন্যবারের তুলনায় কম। এখন বাজারে দেশি জাতের (মোফাজ্জর জাতের) লিচু উঠতে শুরু করেছে। বোম্বাই লিচু বাজারে আসতে আর সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।
পিএম