জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির প্রস্তাবনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গত ১৫ মে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মবিরতির ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, শুল্কায়ন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া স্থগিত থাকায় দেশের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি এবং বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার আমদানি এবং পাঁচ হাজার রপ্তানি বিল দাখিল হয়। কিন্তু চলমান কর্মবিরতির ফলে এসব কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বন্দর ইয়ার্ডে বর্তমানে আটকে আছে শত শত কনটেইনার, যেগুলো যথাসময়ে খালাস না হওয়ায় পচনশীল ও জরুরি পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম সময়ের কন্ঠস্বর-কে জানান, “আমরা কেবল রপ্তানি এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রেখেছি। আমদানি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম কর্মবিরতির আওতায় রয়েছে।”
কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাস্তবে রপ্তানিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রামের একজন সিএন্ডএফ এজেন্ট বাপ্পু দাশ বলেন, “তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করলেও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় সেগুলো আটকে আছে। এতে নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্ট অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
চট্টগ্রাম আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, এ অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে বন্দরে কনটেইনার জট আরও বাড়বে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। এর ফলে বাজারে পণ্যের সংকট, মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের ভোগান্তি অনিবার্য হয়ে উঠবে। তারা দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, “কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পণ্য বন্দরে আটকে আছে। বিশেষ করে পচনশীল পণ্যের ক্ষতি প্রতিদিন বাড়ছে। সময়মতো ডেলিভারি না দিলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোক্তা পর্যায়ে।”
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমদানি কার্যক্রম একদম বন্ধ। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে।” তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে সরকারের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং দ্রুত সমাধানের দাবি জানানো হয়েছে।
চলমান সংকটের প্রভাব ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। সামনে ঈদুল আজহা—এ সময়ে পণ্যের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। কিন্তু কাস্টম হাউসের অচলাবস্থার কারণে নিত্যপণ্যের ঘাটতি এবং অতিরিক্ত দামে বিক্রির প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হলে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এমআর