এইমাত্র
  • টরন্টোতে প্রদর্শিত হলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘সাবিত্রী’
  • মুসলিম নারীর নিকাব টেনে খুলে ফেলায় সমালোচনার মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী
  • ‘নিরাপত্তা’র কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি প্রার্থী
  • রেকর্ড দামে কলকাতায় ক্যামেরন গ্রিন
  • মহান মুক্তিযুদ্ধের নায়ক থেকে রূপালি পর্দায়
  • ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ ঘোষণা আজ, যারা আছেন আলোচনায়
  • মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
  • দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার হবেন অজুর্না রানাতুঙ্গা
  • লন্ডনে তারেক রহমানের শেষ কর্মসূচি আজ
  • মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা ইতিহাসের ৯০ ভাগই মিথ্যা: আমির হামজা
  • আজ মঙ্গলবার, ২ পৌষ, ১৪৩২ | ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সাংবাদিককে ম্যানেজের চেষ্টা ঠিকাদারের

    কক্সবাজারে ৩৮ লাখ টাকার সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক 'অনিয়ম', নীরব সওজ

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১১:৩৫ এএম

    কক্সবাজারে ৩৮ লাখ টাকার সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক 'অনিয়ম', নীরব সওজ

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১১:৩৫ এএম

    কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া বাজারে ৩৮ লাখ টাকার একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রকল্পে কার্যত ‘বালির উপর স্বপ্নের রাস্তা’ তৈরির প্রয়াস চলছে- যেখানে নিয়মকানুন ও মানসম্মত নির্মাণ একেবারেই উপেক্ষিত।

    স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প অনুযায়ী এক ফুট আট ইঞ্চি পুরুত্বে বালির উপর খোয়া দিয়ে ব্রিক সলিন বসানোর কথা থাকলেও বাস্তবে কাজের একপাশে কোনো খোয়া ব্যবহৃত হয়নি। পুরোপুরি বালির উপরই ইট বিছিয়ে দায়সারা কাজ চালাচ্ছেন ঠিকাদার জাফর। বিভিন্ন সময় স্থানীয়দের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে সামান্য অংশে খোয়া ব্যবহার করা হলেও তা ছিল লোক দেখানো মাত্র।

    স্থানীয় এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা চোখের সামনে দেখছি কাজ কেমন হচ্ছে। যে খোয়ার কথা ছিল, সেটা শুধু ফাইলপত্রেই আছে। রাস্তার একপাশে কিছু খোয়া দিলেও আরেকপাশে শুধু বালি। এটা তো জনগণের টাকা মারার শামিল।”

    আরেকজন প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষোভ ঝাড়েন, “এমন দুর্নীতি বহুদিন দেখিনি। রাস্তার যে অবস্থা, দুই মাসের মাথায় ভেঙে যাবে। আমরা এই কাজ বন্ধ করে পুনরায় মানসম্মত কাজ চাই।”

    এ নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, খোয়া বিছানোর কোনো প্রক্রিয়া নেই একাধিক স্থানে। কাজের মান যাচাইয়ের জন্য নিয়োজিত প্রকৌশলীদের দেখা মেলেনি। বরং স্থানীয় সূত্র বলছে, সওজের এসডি (সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার) এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনেও চুপচাপ থেকে দুর্নীতির অংশীদার হয়েছেন। তাদের প্রত্যক্ষ মদদেই ঠিকাদার কাজের মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।

    এই অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন খরুলিয়ার সচেতন তরুণরাও। তারা সরেজমিনে গিয়ে দুর্নীতির প্রমাণসহ ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, রাস্তার একপাশে খোয়ার নাম-নিশানা নেই- শুধু বালির উপরই বিছানো হচ্ছে ব্রিক সলিন। এসব ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। তরুণরা সরাসরি অভিযোগ করেছেন, "এটা উন্নয়ন নয়, এটা লুটপাট। জনগণের টাকা দিয়ে এমন প্রতারণা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।"

    তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সওজের এই দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। তরুণদের ভাষায়, "এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামবো।”

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের নিম্নমানের কাজের ফলে বর্ষা মৌসুমে ফুটপাত ধসে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। ফলে স্থানীয় জনগণের ভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি সরকারের অর্থেরও অপচয় ঘটবে।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার জাফর শুরুতে কাজের মান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেন। তবে যখন প্রতিবেদক সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন করে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন আচমকা সুর পাল্টান ঠিকাদার জাফর। প্রতিবেদককে ফের ফোন করে তিনি বলেন, “স্যারকে ফোন দিয়ে বলবেন কাজের মান ঠিক আছে। আমি বিষয়টা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। একটু পর আমি আপনার সঙ্গে দেখা করবো।”

    কিন্তু তিনি পরে নানা মাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ না করতে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।

    সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, “সব জায়গায় কাজের ইস্টিমেট এক নয়। কোথাও খোয়া দেওয়া আছে, আবার কোথাও নেই। আমার অধীনে অনেক জায়গায় একসাথে কাজ চলছে। খরুলিয়া বাজারে খোয়া দেওয়া আছে কিনা, সেটা আমি খোঁজ নিচ্ছি।”

    তবে তার এই বক্তব্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর তদারকি ঘাটতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন- কাজ চলছে অথচ প্রকৌশলীর জানা নেই কী ধরনের কাজ হচ্ছে, এটি কীভাবে সম্ভব? এমন ‘জানার চেষ্টা করছি’ ধরনের মন্তব্যে প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আরও দৃঢ় হয় বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

    তবে স্থানীয়দের জোর দাবি, অবিলম্বে এই দুর্নীতির তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

    এসকে/আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…