এইমাত্র
  • বকশীগঞ্জের এক স্কুলেরই ৬৬ ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার
  • যমুনায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর, নৌ চলাচল ব্যাহত
  • সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে এভারকেয়ার ছাড়লেন হাদি
  • আগামীকাল সাময়িক বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল
  • হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গুজবে সয়লাব ফেসবুক : ফ্যাক্টওয়াচ
  • কওমী মাদ্রাসার বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচি এগিয়ে আনা হয়েছে
  • কলম্বিয়ায় স্কুলবাস খাদে পড়ে নিহত ১৭
  • হাদির ওপর হামলায় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না: সিইসি
  • হাদিকে গুলি করা অভিযুক্ত মাসুদের ভারতে গিয়ে সেলফি
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    দুর্গম চরেই থ্যাকি, বর্ষা মৌসুমে হামারগুলার সেই কষ্ট বাহে

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ জুন ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ জুন ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

    দুর্গম চরেই থ্যাকি, বর্ষা মৌসুমে হামারগুলার সেই কষ্ট বাহে

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ জুন ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

    কি কমু বাহে! বর্ষা মৌসুমে ধরলা-বারোমাসিয়া নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় হামার দুঃখের শ্যাষ নেই। আজ থেকে ১৫/২০ দিন থেকে হামারগুলার কষ্টে দিন শুরু হয়েছে। নদীতে যতই পানি বাড়ছে ততই হামারগুলার দুর্ভোগ বেড়েই চলবে। হামার গুলার দুঃখ আর কায় দেখে বাহে! হামারগুলার বাড়ির চারিদিকে নদী। দক্ষিণ-পশ্চিমে ধরলা ও উত্তর এবং পূর্বদিকে বারোমাসিয়া। সারাক্ষণ চরেই থাকতে হয়। ঘরে বাজার স্বদাই নেই। তাই আজ ডিঙি নৌকায় করে বারোমাসি নদী পাড়ি দিয়ে বাজারে গেইছি বাহে! এখন আবার নৌকায় যেতে হবে। থাকি একেবারে দীপচরে। বর্ষাকালে আমাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয় বাহে। বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকতে হয়। এভাবেই বছরের ৬ মাস পানির সাথে যুদ্ধ করে দিন পাড় করছি। কেউ যদি একান বাঁশের সাকোর নির্মাণ করে দিতো তাহলে হামার গুলার বড় উপকার হতো বাহে!

    এক বুক কষ্ট নিয়ে কথাগুলো জানালেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চর-সোনাইকাজী গ্রামের ১শ’ ৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা অরিচ মিয়া।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার অরিচ মিয়াসহ প্রায় ৮০টি পরিবার দুর্গম চরে বসবাস করেন। চর সোনাইকাজী এলাকায় অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান, বর্ষাকাল এলেই তাদের কষ্ট বেড়ে যায়। জরুরি প্রয়োজনে চর থেকে বেড় হলেই ছোট ডিঙি নৌকায় তাদের একমাত্র ভরসা।

    ওই এলাকার বাসিন্দা ছয়ফুল ইসলাম, বাছের আলী ও মর্জিনা বেগম জানান, আপনি নিজেও দেখতেছেন বর্তমানে আমাদের পরিস্থিতি। এখন পানি কম থাকায় মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে আমরা নদী পাড় হই। এই চরে ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার বসবাস করেন। এরমধ্যে দুই থেকে তিন জনের নিজস্ব ডিঙি নৌকা আছে। আর বাকি পরিবারগুলোর কারোই নিজস্ব ডিঙি নৌকা নেই। তারা সবাই বারোমাসিয়া নদী পাড় হন ছোট ডিঙি নৌকায় করে। নদীর পাড়ের জন্য আমাদের ৫ টাকা করে দিতে হয় নৌকার মালিককে (মাঝি)।


    এই তিন বাসিন্দা আরও জানান, এখন প্রতিদিনেই কম বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একদিকে বৃষ্টিপাত আর অন্য দিকে উজানের ঢলে ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর পানি বেড়েই চলেছে। বন্যার সময় এই চরের প্রতিটি পরিবারের ঘর-বাড়িতে পানি উঠে। ওই সময়টা প্রায় এক দেড় মাস আমাদের কষ্টটা অনেক বেশি।

    চরে এতো কষ্ট করে থাকেন কেন এমন প্রশ্ন করে তারা জানান, শুকনো মৌসুমে চরে বোরো, ভুট্টা, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে কোন রকম জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। যাদের নিজস্ব জমি নেই তারাও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কিছু কিছু পরিবার আছে তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কষ্ট হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে চরেই বসবাস করছেন।

    মর্জিনা বেগম জানান, বন্যার সময় পুরুষদের তুলনায় নারীদের কষ্টটা অনেক বেশি। নারী শিশু বাচ্চাদের সব সময় নজরে রাখেন। সেই সাথে রান্নাসহ নানা বিষয়ে নারীদের জন্য এক অসহনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয় আমাদের।

    চরে বসবাসরত শিক্ষার্থী লাবন মিয়া ও আখি আক্তার জানান, এখন আমাদের স্কুল বন্ধ। পাড়াপাড়ের ভোগান্তি কম। যখন স্কুল খুলবে তখন আমাদের খুবই সমস্যা দেখা দেয়। এমনিতে আমাদের চরে নেই বিদ্যুৎ অবস্থা। কুপির আলোয় পড়াশুনা করি। সরকার ও বা জনপ্রতিনিধি যদি অন্তত নদী পাড়াপাড়ের জন্য একটি বাঁশের সাকোর ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমাদের অনেকটা দুঃখ দুর্দশা কমতো।

    স্থানীয় জোবেদ আলী (৭২) জানান, আসলেও চর-সোনাইকাজী গ্রামের নদী ওপারের পরিবারগুলো বছরের পর বছর কষ্ট সহ্য করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তাদের চারিদিকে নদী। অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে তারা সেখানে বসবাস করছেন। আমি বলো ওই পরিবারগুলো সারা বছর কষ্ট করছে। শুকনো মৌসুমে বারোমাসিয়া নদীটিতে হাটু পানি দিয়ে চলাচল করতে হয়। এখন পানি বেড়ে যাওয়ায় ডিঙি নৌকায় পাড়াপাড় করছেন। তিনি বারোমাসি নদীতে একটি সাঁকোর ব্যবস্থা করলে তাদের কষ্ট অনেকাংশে কমতো।


    বারোমাসিয়া নদীর পাড়ের নৌকার মাঝি তৈয়ব আলী (৭০) জানান, এই চরে প্রায় ৮০টি পরিবার বসবাস করছে। তারা মূলত সারা বছরেই পানির সাথে যুদ্ধ করেই চলছে। শুকনো মৌসুমে বাড়ি ঘরে পানি থাকলেও বারোমাসি নদীতে হাটু পানি দিয়ে চলাচল করতে হয়। এখন বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। সমস্ত নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। এখন ওই পারের মানুষজন দৈনন্দিন উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হলেই নৌকা দিয়ে পাড়াপাড় করতে হয়। এখানে বড় নৌকা নেই। আমার ছোট একটি ডিঙি নৌকায় এখন তাদের পাড়াপাড়ের কাজে ব্যবহার করছি। সবাই পরিচিত কেউ পাঁচ টাকা দেন, কেউ আবার এক টাকাও দেন না৷ তারপরও তাদের পাড়াপাড় করছি। তবে সারাদিনে দেড় থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। তিনিও সেখানে একটি বাঁশের সাকোর দাবি জানিয়েছেন।

    চর সোনাইকাজী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, দীপ চরে তার ওয়ার্ডে ৬০ থেকে ৬৫টি পরিবার বসবাস করেন। চর জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ গ্রামের ১৫ থেকে ২০টি পরিবার ও চরে বসবাস করেন। দুই গ্রামের প্রায় ৮০টি পরিবার ধুধু বালু চরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। তাদের সবাই বর্ষাকালে অনেক কষ্ট করে সেখানে পরিবার -পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। অবশ্য তাদের যাতায়াতের জন্য একটা সাকো নির্মাণ করাও খুবই জরুরি। আমরা বন্যা আসলেও চরের প্রতিটি পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়।

    শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শরিফুল ইসলাম মিয়া সোহেল জানান, আসলেই চর সোনাইকাজী ও জ্যোতিন্দ্র নারায়ণের অল্প কিছু অংশসহ ওই দুর্গম চড়ে প্রায় ৮০টি পরিবার যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তাদের চারিদিকে নদী। বর্ষা মৌসুমে বাড়ি-ঘর পানিসহ তাদের চারিদিকে যেস মহা সমুদ্রে পরিণত হয়। মুলত তারা ৬ মাস তারা সীমাহীন কষ্টে থাকেন। নেই বিদ্যুৎ অবস্থা। তারপরও তারা বেঁচে থাকার তাগিদে ওই সব দুর্গম চরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। বর্ষাকালে সেখানকার পরিবারগুলোকে সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। তবে একটা বাঁশের সাকোর ব্যবস্থা করা হলে তাদের অনেকটা দুর্ভোগ কমবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…