মিথ্যা তথ্য ও জাল অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করায় বরগুনার আমতলী উপজেলায় সাহিদা বেগম (৫০) নামের এক নারীকে দুই দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও দুই দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. ইফতি হাসান ইমরান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আদালতের পেশকার মো. কামাল হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার হুলাটানা গ্রামের সাহিদা বেগমের পুত্রবধূ খাদিজা বেগমের নামে তার শাশুড়ি মোসা. সাহিনুর বেগম একটি জমি দলিলনামা বা এফিডেভিটের মাধ্যমে লিখে দেন। পরে সাহিনুরের স্বামী মারা গেলে, পারিবারিক কলহের জেরে শাশুড়ি সাহিদা বেগম ওই এফিডেভিটকে জাল দাবি করে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুত্রবধূ খাদিজা বেগমসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিষয়টির তদন্তভার বরগুনা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওপর ন্যস্ত করেন। তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, সাহিনুর বেগম সত্যিই তার ইচ্ছায় এফিডেভিট করে জমি লিখে দিয়েছেন এবং এখানে জালিয়াতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তদন্তে প্রতারণার প্রমাণ না মেলায় সাহিদা বেগম আদালতে হাজির হয়ে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন জানান। তিনি স্বীকার করেন, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলাটি করেছিলেন এবং এটি ছিল তার ভুল।
এ সময় আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা বিচারকের অনুমতিক্রমে বিষয়টি তুলে ধরেন এবং জানান, বাদী ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেছেন।
বিচারক মো. ইফতি হাসান ইমরান ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী সাহিদা বেগমকে দুই দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলার কারণে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয় এবং নির্দোষ ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হন। এ ধরনের মামলার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আদালতের পেশকার কামাল হোসেন বলেন, ‘একটি বৈধ দলিলকে মিথ্যা দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করায় বিচারক সাহিদা বেগমকে দণ্ড দিয়েছেন। এ ধরনের রায় ভবিষ্যতে মিথ্যা মামলাবাজদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।’
এই রায়কে ঘিরে আমতলী উপজেলা আদালত এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করলে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত, যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।
এনআই