এইমাত্র
  • লোহাগাড়ায় ইটভাটায় অভিযান-জরিমানা
  • নারায়ণগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় বাল্কহেড ডুবি
  • আজও হাত মেলায়নি ভারত-পাকিস্তান
  • মিরসরাইয়ে জুলাই যোদ্ধা তাহমিদ হত্যায় ছাত্রদল কর্মী গ্রেপ্তার
  • নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করবে পুলিশ
  • এবার হলিউডে নাম লেখালেন রোনালদো!
  • আইপিএল নিলাম থেকে বাদ পড়লো ৯ ক্রিকেটারকে
  • মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতা, হাদির অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক
  • হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত, বিদেশে নেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে: চিকিৎসক
  • মেসিকে ‘দখলে’ নিতে দুই মন্ত্রীর দ্বন্দ্বে স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলা
  • আজ রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    বিলুপ্তির পথে হাতে বোনা ঝাঁকি জাল, বিপাকে কারিগররা

    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০২:২২ পিএম
    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০২:২২ পিএম

    বিলুপ্তির পথে হাতে বোনা ঝাঁকি জাল, বিপাকে কারিগররা

    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০২:২২ পিএম

    একটা সময় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি পরিবারের কাছে হাতে বোনা ঝাঁকি জাল ছিল নিত্য প্রয়োজনীয়। কারণ, জাল দিয়ে বাড়ির পুকুর কিংবা কোলা-বিলে মাছ ধরার একটা প্রবণতা ছিল অধিকাংশ পরিবারের। কিন্তু কালের আবর্তে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বংশপরম্পরায় জাল বোনার কারিগররা।

    সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কালাইয়া বাজারের বৃহৎ জালের বাজারের হাটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কারিগরদের নিপুণ হাতে বোনা ঝাঁকি জাল, মই ঝাল ও ধর্মজাল। ক্রেতার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন জালের কারিগররা। তবে তেমন দেখা মিলছে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। এতে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরছেন হাটে জাল বিক্রি করতে আসা কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।


    কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জালের প্রকারভেদে দামও ভিন্ন ভিন্ন। ৪ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৫ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৬ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ৭ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম ১ হাজার ৮০০-২ হাজার ২০০ টাকা। ১০ হাত ধর্মজালের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ১৫ হাত ধর্মজালের দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং মই জালের দাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। তবে হাটে তুলনামূলক জালের ক্রেতার সংখ্যা কম।

    হাটে জাল বিক্রি করতে আসা উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের আলামিন মোল্লা বলেন, তার বাপ-দাদা জালের কারিগর ছিলেন। তিনিও বংশপরম্পরায় জাল বুনছেন। এসব জাল হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু এখন আর হাতে বোনা জালের কদর নেই।

    বড়ডালিমা গ্রামের আয়েনআলী মাঝি বলেন, 'বছরের ৭ থেকে ৮ মাস জালের চাহিদা থাকে না। বর্ষা মৌসুমে ক্রেতা বেড়ে থাকে। তবে আগের মতো জালের কদর নেই। এক দিকে খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুর-ডোবায় তেমন মাছ নেই, অন্যদিকে আধুনিকতার যুগে মানুষের ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরার চর্চা নেই। যে কারণে জালের কদর কমছে।'

    শৌলা গ্রামের জাল বিক্রেতা মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, 'এক সময় গ্রামের মানুষ সুযোগ পেলেই জাল নিয়ে নদী খালে মাছ ধরতে নেমে যেতেন। এ যুগের ছেলে-পেলেরা ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরতেই জানেন না। যে কারণে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঝাঁকি জাল হারিয়ে যেতে বসেছে।'

    পরিবেশ নিয়ে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন 'সেইভ দি বার্ড এ্যান্ড বি' নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এ বাশার বলেন, 'এক সময় খালে-বিলে ডোবা নালায় প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। গ্রামের মানুষ এসব মাছ ধরে পারিবারিক চাহিদা পূরণসহ বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করত। কয়েক দশক ধরে কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক খালে-বিলের পানিতে মিশে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। একইভাবে বিলে-খালে নিষিদ্ধ ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও মাছের রেনু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। যে কারণে দিনদিন দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঝাঁকি জালের ব্যবহারও কমেছে। এছাড়া এ জালের ব্যবহার কমার পিছনে আধুনিকতার প্রভাবও রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।'

    দেশীয় প্রজাতির মাছ কমছে, স্বীকার করেছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, 'নিষিদ্ধ জাল ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ ও রেনু ধ্বংস হচ্ছে। এসব নিষিদ্ধ জালে ব্যবহার বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এসব জাল পুড়িয়ে ধ্বংসসহ জেল জরিমানাও করছি। তবে কাজ হচ্ছে না। সরকারের এসব জালের উৎপাদন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত।'

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…