এখন বর্ষাকাল। বিরামহীন বৃষ্টির কারণে বাউফল উপজেলার খাল, বিল, ডোবা, নালা পানিতে টুইটুম্বুর। এ সকল ডোবা নালায় প্রকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে হরেক প্রজাতির দেশিও মাছ। এ সকল মাছ শিকার করেন গ্রামের দরিদ্র ও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। মাছ শিকার করতে ব্যবহার করেন বাঁশের তৈরি বিশেষ এক ধরনের ফাঁদ। এই ফাঁদের নাম চাই।
উপজেলার কালাইয়া বন্দরের ধানহাটা সংলগ্ন চাইয়ের হাটে গিয়ে দেখা যায়, বরিশালের স্বরুপ কাঠি ও পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে ট্রলার যোগে কয়েকজন বিক্রেতা বসিয়েছেন চাইয়ের হাট। সারি সারি চাই সাজিয়ে বিক্রি করছেন স্থানীয়দের কাছে।
স্বরুপকাঠীর চাই বিক্রেতা মো. রুহুল আকন বলেন, কালাইয়া বাজারে তারা প্রায় ১৮ বছর ধরে এই চাই বিক্রি করতে আসছেন। প্রতিটি চাই বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্ষা মৌসুমকে ঘিরেই তাদের এই ব্যবসা।
নাজিরপুরের বিক্রেতা সুখরঞ্জন ঘড়ামি বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ কিনে নিয়ে বাড়িতে বসে শ্রমিক দিয়ে চাই তৈরি করেন। বর্তমানে বাঁশের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ সীমিত। সুখরঞ্জন বলেন, একটি মাঝারি সাইজের বাঁশ ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা। একটি বাঁশ দিয়ে ৩০টির মতো চাই তৈরি করা যায়। প্রতিটি চাইয়ের মজুরি দেওয়া হয় ১০০ টাকা করে। তারপরে পরিবহন খরচ।
চাই ক্রেতা উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের আলতাফ আকন বলেন, তিনি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। সম্প্রতি বিরামহীন বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে কোলা বিল পানিতে ডুবে গেছে। তিনি ২৮০ টাকা দরে ১০টি চাই কিনেছেন। চাইগুলোর ভিতরে মাছের কিছু খাবার রেখে বিকালে জমির আইল ঘেঁসে বিভিন্ন স্থানে এবং ছোট ছোট নালায় পেতে রেখে সকালে উঠিয়ে ফেলি। ১০টি চাইতে যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ে তা নিজেরা কিছু রেখে বাজারে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি করা যায়।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরমিয়াজান গ্রামের গৃহবধু রাহিমা বেগম ২০টি চাই কিনেছেন। রাহিমা বলেন, এই চাইতে দেশিও প্রজাতির সুস্বাদু ট্যাংরা, পুটি, খইলাশা, পাবদা, ভেদি, এই বর্ষা মৌসুমে চাইয়ের মাছ বিক্রি করে তিনি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পান। যা দিয়ে তিনি তার দিনমজুর স্বামীর আয়ের সাথে যোগ করে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন।
যদিও মাছ শিকারের এ ধরনের চাইয়ের বিরোধিতা করে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন 'সেইভ দি বার্ড এ্যান্ড বি' এর পরিচালক এম এ বাশার বলেন, এটাকে আমি চাই বলি না। বলি মাছ ধরার ফাঁদ। এই ফাঁদটি কোনভাবেই পরিবেশবান্ধব নয়। ফাঁদটি এমনভাবে তৈরি, মাছের পোনাসহ রেনু পর্যন্ত আটকে থাকে। দেশিও প্রজাতির হরেক প্রকারের মাছ হারিয়ে যাওয়ার পিছনে এই ফাঁদটির ভূমিকা রয়েছে। তিনি চাই নামের এই ফাঁদটি নিষিদ্ধের দাবি জানান।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, এই ধরনের চাইয়ের বিষয়ে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই। তবে চাইগুলো বন্ধের বিষয়ে উপরস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।
এসআর