এইমাত্র
  • ‘ফকির, মিসকিনদের ছেলে-মেয়েরা বড় রাজনৈতিক দলের নেতা’
  • রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সাইবার হামলার অভিযোগ
  • জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তায় কমিটি করা হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ‘দিল্লির মসনদ’ জ্বালিয়ে দেব: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার
  • প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য হাদিকে বিদেশে পাঠাবে সরকার
  • মেসিকে দেখতে না পেয়ে স্টেডিয়ামে সমর্থকদের ভাঙচুর
  • জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি’র সাবেক এমপি
  • ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
  • যারা নির্বাচন চায় না, তারাই হাদির ওপর হামলা করেছে: সালাউদ্দিন আহমেদ
  • আজ শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    এক পরিবারের তিন সন্তানের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের মাতম

    কামরুল হাসান, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
    কামরুল হাসান, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম

    এক পরিবারের তিন সন্তানের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের মাতম

    কামরুল হাসান, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম

    ‘বিভৎস সন্তানের লাশ দেখার সুযোগ নেই আনোয়ারার। বাকশক্তি রুদ্ধ। গাড়ি থেকে যখন নামানো হলো লাশের খাটিয়া, এগিয়ে এসে তিনি তা স্পর্শ করলেন। বুক চাপড়ে আহাজারি করতে করতে বললেন, ‘বাবা, তোমরা না তোমাদের বাবাকে দেখে রাখতে বলেছিলে? একবার কথা বল, শুধু একবার’—সন্তানদের উত্তর মেলেনা। আনোয়ারা বেগমের বুঝতে বাকী নেই, এই খাটেই চির নিদ্রায় তাঁর আদরের দুই সন্তান।

    রবিবার (০৬ জুলাই) সকালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর এলাকার ছোট্ট একটি গ্রাম তালুকদার পাড়ায় শত সহস্র মানুষ এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেছে, নিরবে ভেসেছে চোখের জলে।

    আনোয়ারা বেগমের ছয় সন্তান। তিন ছেলে আর তিন মেয়ে। মেঝ ছেলে মোহাম্মদ রুবেল (২৭) গত বছর সৌদি আরবে চরম নির্যাতনে শিকার হয়ে নিহত হন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার তার মরদেহ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করেন বড় ভাই মোহাম্মদ বাবুল (৩৭) ও ফুফাত ভাই মো. ওসমান গণি (৩৫)। বিকেলে লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্সটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় পৌঁছালে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মোহাম্মদ বাবুল এবং ওসমান গণি। সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার সর্বত্রই নামে শোকের ছায়া।

    নিহতের স্বজনরা জানান, রুবেল পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ২০২৪ সালে সৌদি আরব পাড়ি দেন। সেখানে দোকান মালিকের অনুমতি ছাড়া একটি বার্গার খেয়ে তিনি শারীরিক নির্যাতনে গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গত বছরের ১৭ জুলাই রুবেল মারা যান। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার লড়াই শেষে শনিবার তার নিথর দেহ দেশে ফেরে।

    নিহত ওসমান গণির ফুফাতো ভাই মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘মেঝ ভাই রুবেলের লাশ নিয়ে আসার পথে এক্সিডেন্টে বড় ভাই বাবুলও মারা যান। এই কষ্ট আমরা কীভাবে সইব?’ এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

    নিহত রুবেল ও বাবুল তালুকদার পাড়ার ফুল মিয়ার ছেলে এবং ওসমান একই এলাকার আধা কিলোমিটার দূরে জয়নাল আবেদিনের ছেলে। তারা সম্পর্কে আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই।

    সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রুবেল ও বাবুলের আধাপাকা ঘরের একটি কক্ষে স্বজনদের নিয়ে একটু পর পর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মা আনোয়ারা বেগম। উপার্জনক্ষম দুই সন্তানকে হারিয়ে কীভাবে সংসারের হাল ধরবেন, কীভাবে অন্যরা মানুষ হবেন, তা নিয়ে বিলাপ করছিলেন তিনি।

    নিহত বাবুলের স্ত্রী সাহেদা আকতার বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন। ছোট্ট দুই কন্যাসন্তানকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন তিনি। সাহেদা আকতার বলেন, ‘আমি এখন সন্তানদের কী জবাব দেবো? কী নিয়ে বাঁচবো? কে দেবে তাদের সান্তনা?’

    বাড়ির উঠোনজুড়ে স্বজন হারানোর আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী। সংসারের উপার্জনক্ষমদের হারিয়ে অন্যদের মধ্যে হতাশা ভর করেছে। প্রতিবেশী ও স্বজনরা শোকাহত পরিবারগুলোকে সান্তনা দিতে বাড়িতে ভিড় করেন। তাদের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে ঘরের ভেতর থেকে।

    ১৭ বছর বয়সী রুবেলের ছোট বোন রুম্পা আকতার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাইয়েরাই ছিল আমাদের ভরসার জায়গা। বাবা-মায়ের আশ্রয়স্থল। হে আল্লাহ, আমাদের এ কী করলে তুমি, কেন করলে?’

    গ্রামের অন্য প্রান্তে নিহত ওসমানের বাড়ি। ওসমান উপজেলার তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। তিনি একথা বলেই বিলাপ করেন স্ত্রী নুসরাত জাহান শিমা। দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে কীভাবে তিনি বাঁচবেন এ নিয়ে উৎকণ্ঠায়। শিমা বলেন, ‘দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগেও লাশ নিয়ে ফিরেছেন বলে কথা হয়। কিন্তু তিনি ফিরলেন কফিনে বন্দি লাশ হয়ে।’

    শনিবার মধ্যরাতে রুবেলের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই আসে ওসমান ও বাবুলের বহনকারী লাশের গাড়িটি। রুবেলকে রাতে কবরস্থ করলেও বাবুল ও ওসমানের মরদেহ রবিবার সকালে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় মসজিদ মাঠে কবরস্থানে। লাশের পিছে পিছে ছুটে চলে শত সহস্র মানুষ। নিঃশব্দে আহাজারি করছিলেন অনেকে।

    এসকে/আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…