কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবির ঘটনায় দুই বোনের অকাল মৃত্যুতে পরিবারটিতে এখন চলছে কেবলই আর্তনাদ। সন্তানদের হারিয়ে কেবলই বিলাপ করছেন ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও নীপা আক্তার দম্পতি। মাঝে মাঝে মূর্ছা যাচ্ছেন মা নীপা আক্তার।
রবিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে নিহতের বাবা আব্দুর রহমান জানান, শনিবার (১২ জুলাই) ‘দুপুরে গ্রামের কবরস্থানে বড় মেয়েকে দাফন করলাম আর ছোট মেয়েকে দাফন করলাম বিকেলে। এমন দুর্ভাগ্য যেন আর কারও না হয়, এই দোয়া করি।’ এদিকে, দুই মেয়ে হারানোর শোকে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন তিনি, তার চেয়েও বেশি যেন তাকে পোড়াচ্ছে অনুশোচনায়।
আব্দুর রহমান আরও জানান, দু’টি মেয়ে সারাক্ষণ আনন্দে সংসার ভরিয়ে রাখতো। আশা ছিল- পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। আমরা সমাজে মর্যাদা নিয়ে বাঁচবো। তা আর হলো না। আমাদের একেবারে শূন্য করে চলে গেল। এই শূন্যতা কীভাবে ভুলবো?
এর আগে গত শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধে সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলেন আব্দুর রহমান। একটি নৌকায় তারা মাঝনদীতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের টানে উল্টে যায় সেটি। আশপাশের কয়েকটি নৌকা তাকে ও তার স্ত্রী নীপা আক্তারকে (৪০) উদ্ধার করে। সাঁতার না জানা দুই মেয়ে কাশ্মীরা রহমান নীলা (১৭) ও ফারিয়া রহমান নীহা (৯) মুহূর্তেই তলিয়ে যায়। ওই দিন বিকেলেই কলেজ পড়ুয়া বড় বোন নিলার (১৭) মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। আর ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া নীহাকে (৯) খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরের দিকে নীহার মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। এ ঘটনার পর ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেন শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে এক ভিডিও বার্তায় ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ চরটেকি এলাকার বেড়িবাঁধে ভ্রমণ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেন। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ভ্রমণের অনুমতি দেবেন না বলে জানান তিনি।
চৌদ্দশত ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাহার আলী জানান, আব্দুর রহমান পাশের পুলেরঘাট বাজারে ভাঙারি ব্যবসা করেন। নিলা ও নীহার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোক বিরাজ করছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, মা-বাবা তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় নৌভ্রমণে বের হলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আব্দুর রহমান সাঁতরে রক্ষা পেলেও মা নীপা ও বড় মেয়ে নীলাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরীক্ষা করে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর নীপাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ছোট মেয়ে নীহাকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। শনিবার বেলা পৌনে ১২টার সময় মরদেহ ভেসে উঠলে ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে।
উল্লেখ, গত ১ জুলাই সকালে নৌকায় মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে পাকুন্দিয়ার চরফরাদি ইউনিয়নের চরআলগি গ্রামের তিন শিক্ষার্থী জুবায়ের (৭), শাপলা (১৪) ও শাপলার ভাতিজা আবির (৬) ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবে মারা যায়। শুক্রবারও একই নদীতে ঘটলো আরেকটি দুর্ঘটনা।
এসআর