নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় তিন বছরের এক কন্যা শিশুকে হত্যার দায়ে তার সৎ মাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শারমিন নিগার এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারীর নাম জোবাইদা বেগম। তিনি লোহাগড়া উপজেলার গিলাতলার সজীব কাজীর স্ত্রী। হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির নাম নুসরাত জাহান রোজা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে মামলার বাদী আবুল খায়ের কাজীর ছেলে সজিব কাজীর সাথে তার প্রথম স্ত্রী রুপা খাতুনের সাথে পারিবারিক দন্দের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তখন সজিবের ৫ বছরের ছেলে ইয়ামিন ও তিন বছরের কন্যা নুসরাত জাহান রোজা তার দাদা মামলার বাদীর সাথে বসবাস করতে থাকে। সজিব কাজী তার ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা করে পুনরায় আসামী জোবাইদা বেগমকে বিবাহ করেন।
ঘটনা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৭ তারিখে সকালে নুসরাতকে তার বড় ভাই ইয়াসিন মারধর করলে সে কান্না করে। নুসরাতের কান্না থামাতে সৎ মা তাকে বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে যায়, তবুও শিশুটি কান্না করতে থাকলে এক পর্যায়ে তার সৎ মা জোবাইদা বেগম নুসরাতের মুখ চেপে ধরেন। এতে নুসরাত শ্বাসরোধে মৃত্যুবরণ করে। নুসরাতের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে সেটি বুঝতে পেরে জোবাইদা তাকে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে তার শ্বশুর মোঃ খায়ের কাজীর বসত ঘরের বারান্দার খাটে শুয়ে রাখে।
দাদা মোঃ খায়ের কাজী বাইরে থেকে বাড়িতে এসে নুসরাতকে গোসল করানোর জন্য ডাকাডাকি করে। দাদি পান্না বেগম নুসরাতকে না পেয়ে সৎ মা জোবাইদা বেগমকে জিজ্ঞাসা করেন, 'নুসরাত কোথায়? আমি তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।' তখন জোবাইদা বেগম শাশুড়ীকে বলেন, 'নুসরাত তার দাদার বারান্দায় ঘুমাচ্ছে।' তখন দাদি পান্না বেগম বারান্দায় গিয়ে নুসরাতকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
এ সময় পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগড়া থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনার দিনেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নুসরাতের বাবা সজীব কাজী ও সৎ মা জোবাইদা বেগমকে আটক করে লোহাগড়া থানা পুলিশ। তবে নুসরাতের বাবা সজীব কাজীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরের দিন এ ঘটনায় নিহত নুসরাত জাহান রোজার দাদা মোঃ খায়ের কাজী সৎ মা জোবাইদা বেগমকে একমাত্র আসামি করে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ে করেন। মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে এ আদেশ দেন আদালত। রায়ের সময় আসামী পলাতক ছিলেন।
এনআই