প্রবাসে প্রেম, দেশে ফিরে এসে বিয়ে, এরপর স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে অনশনে বসা এক তরুণীর অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তরিগড়ি করে অনশন ভেঙে ভোলা ছেড়ে নিজ জেলায় পালিয়ে যায়। তরুণীর নাম সীমা বেগম। তার বাড়ি নওগাঁ জেলায়।
গেল মঙ্গলবার দুপুরে ভোলার লালমোহন উপজেলার ধৌলিগরনগর ইউনিয়নে ওমান প্রবাসী শিহাব হোসেন সাগরের বাড়িতে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে অনশনে বসেন ওই তরুণী। এরপর তার অনশনে বসা বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। এরপর বেড়িয়ে আসে এক থলের বিড়াল। এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে এলো।
পাল্টা অভিযোগ আসতে থাকে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে। একাধিক পুরুষের সঙ্গে কাটানো অর্ধউলঙ্গ ছবি আর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বেশ কিছু ডকুমেন্টস আসে এই প্রতিবেদকের হাতে। যেখানে বেশ কিছু প্রবাসী পুরুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। পুরুষের সঙ্গে কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তরিগড়ি করে অনশন ভেঙে দ্রুত পালিয়ে যান ওই তরুণী।
এদিকে, স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবি নিয়ে প্রবাসীর বাড়িতে অনশনে বসায় প্রবাসীর মানসম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে দাবি করে ওই তরুণীর উপযুক্ত শাস্তি ও বিচার চেয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ভোলা শহরের একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী প্রবাসী সাগরের বাবা ইলিয়াস মৃধা জানান, ১০ বছর ধরে তার ছেলে ওমানে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। গেল ৪ বছর আগে ভোলার শশিভূষণের প্রবাসী মাজেদ মুন্সির মেয়ের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সাগরের। তার একটি দেড় বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রী ও সন্তান সাগরের বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। হঠাৎ সীমা নামের এক নারী ছেলের বউ দাবি করে তার বাড়িতে এসে ওঠেন।
তিনি আরও জানান, প্রবাসে থাকাকালীন তার ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয় সীমার। এরপর সীমা তার ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। সীমা একজন দুশ্চরিত্রা নারী। পুরুষদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, 'ওই তরুণী প্রবাসে পতিতাবৃত্তি করতেন। পতিতাবৃত্তির দায়ে ওমানের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ভিসা ও পাসপোর্ট বাতিল করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এরপর সে ভুয়া কাবিননামা নিয়ে আমার বাড়িতে এসে আমার ছেলের বউ দাবি করে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেন। পরে, বিষয়টি জানাজানি হলে ওই তরুণীর একাধিক অপকর্মের ছবি আমাদের কাছে আসে। এরপর সেগুলো ফাঁস হলে দ্রুত ভোলা ছেড়ে পালিয়ে যায় তরুণী। এসময় তিনি তার উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন।'
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, 'ওই তরুণী একজন পতিতা নারী। প্রবাসে গিয়ে পুরুষদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে পতিতাবৃত্তি করতেন। আর সুযোগ বুঝে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ধারণ করে রাখতেন। পরে ওই ছবি দিয়ে পুরুষদের ব্ল্যাকমেইল করতেন ওই তরুণী। দেশে ফিরে এসেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রবাস ফেরত কিংবা বিদেশে থাকা ছেলেদের টার্গেট করে তিনি গড়ে তুলেছেন ভয়ঙ্কর এক প্রতারণার জাল। যার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রবাসী জানান, 'এই নারী তার ফোন নম্বর ওমানের সৌড়াভ শহরে ছড়িয়ে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করতেন। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেমের অভিনয়, এরপর ভিডিও কলে রোমান্টিক মুহূর্ত শেয়ার করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। পরে, বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিতেন টাকা। তার প্রতারণার জালে সাগরসহ আরও অনেকেই ফেঁসেছেন। তিনিও এই প্রতারক নারীর বিচার দাবি করেন।'
অপর এক প্রবাসী জানান, 'ওই তরুণীর সুন্দর রূপ দেখিয়ে প্রতারণা করতেন। ভিডিও কলে ফাঁদ পেতে করতেন নানা রকম অঙ্গভঙ্গি। পরে, সেগুলো ধারণ করে রেখে সুযোগ বুঝে প্রতারণার জাল বিছিয়ে করতেন ব্ল্যাকমেইল। নানা অজুহাতে হাতিয়ে নিতেন টাকা। টাকা না দিলে হুমকি দিতেন সম্মানহানির।'
তবে ওই তরুণীর দাবি, গেল বছরের নভেম্বর মাসে রাজধানী ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার একটি কাজী অফিসে সাগরের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। এখন সাগর তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করায় তিনি স্ত্রী'র দাবি নিয়ে সাগরের বাড়িতে আসছেন।
এছাড়াও একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভাইরাল হওয়া ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তরুণী জানান, ছবি গুলো এডিটিং করা, এগুলো তার না। তিনি কারো সঙ্গে এমন ছবি তোলেননি বলে প্রতিবেদকের ফোন কেটে দেন। পুনরায় তাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, মেয়েটি সাগর নামের প্রবাসীকে ঢাকায় বিয়ে করেছেন দাবি করে একটি কাবিননামা নিয়ে আইনগত সহায়তার জন্য আমাদের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু কাবিননামায় ছেলে ও ছেলের বাবার নাম সঠিক ছিলো না। তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাই ঢাকায়। তাই তাদেরকে ঢাকার সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এইচএ