চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের দেওয়া ওয়াকিটকি বার্তা ফাঁসের অভিযোগে অমি দাশ নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (১৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে খুলশী থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া অমি দাশ সিএমপির টেলিকম ইউনিটের সদস্য। বর্তমানে তিনি প্রেষণে খুলশী থানায় কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। বাবার নাম রাজিব দাশ।
গত ১১ আগস্ট দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ গুরুতর আহত হন। এর পরদিন রাতে কমিশনার ওয়াকিটকিতে সিএমপির সব সদস্যকে কঠোর নির্দেশনা দেন।
বার্তায় তিনি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেন–সব মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি, ডিবি টিম এবং চেকপোস্টের সদস্যদের লাইভ অ্যামুনিশন ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুধুমাত্র রাবার বুলেট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কমিশনার আরও বলেন, পুলিশের কোনো টহল পার্টির সামনে অস্ত্র বের হলে, সেটা ধারালো অস্ত্র হোক বা আগ্নেয়াস্ত্র–গুলি চালানো হবে। আত্মরক্ষার অধিকার পুলিশ সদস্যদের রয়েছে এবং সরকারি গুলির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সিএমপি কমিশনারের এই ওয়্যারলেস বার্তা একজন কর্মকর্তা ভিডিও করে বাইরে ছড়িয়ে দেন। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে বাহিনীর ভেতরে তীব্র অস্বস্তি তৈরি হয়।
অভ্যন্তরীণ গোপনীয় বার্তা বাইরে চলে যাওয়ায় সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেন। এরপর একাধিক তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তদন্তে অমি দাশের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে।
খুলশী থানার একটি সূত্র জানায়, অমি দাশের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।
সিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওয়াকিটকি বার্তা হলো বাহিনীর কৌশলগত যোগাযোগের মাধ্যম। এটি বাইরে চলে গেলে পুলিশি কার্যক্রম ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ তথ্য গোপন রাখা বাহিনীর শৃঙ্খলার বড় অংশ। এ ধরনের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। ভবিষ্যতে যাতে আর এমন না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হবে।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও রাজপথের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সবসময় সতর্ক অবস্থায় থাকতে হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের মতো কৌশলগত নগরে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় কমিশনারের নির্দেশ ফাঁস হওয়া কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৃঙ্খলাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, বরং গোপনীয় তথ্য সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
পিএম