কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় সম্প্রতি বেড়ে গেছে অস্ত্রধারী মাদক কারবারিদের উৎপাত। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদককারবারি ও অস্ত্র সরবরাহে একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব সিন্ডিকেটের যোগানদাতারা স্থানীয় ও রোহিঙ্গা উভয় গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা না যাওয়ায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
২৬ আগস্ট রাতে হাতে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন ব্যক্তি প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করছে। সেখানে কে কী করবে, কাকে আক্রমণ করবে—তা নিয়ে প্রকাশ্যে পরিকল্পনা করা হয়। ভিডিওতে রমজান আলী নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রসহ দেখা যায়। তার সঙ্গে রয়েছে এক অপরিচিত রোহিঙ্গা যুবকও।
জানা গেছে, তারা উভয়ে সীমান্তের শীর্ষ মাদক কারবারিদের সদস্য। তাদের পিছনে যোগানদাতা হিসেবে কাজ করছে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা একাধিক গডফাদার।
ভিডিওর সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে সিন্ডিকেট প্রধান হিসেবে পরিচিত কয়েকজনের নাম। তাদের মধ্যে অন্যতম ছৈয়দুল বশর, যিনি এলাকায় 'ছি ছি' নামে পরিচিত। এ ছাড়া আরও কয়েকজন স্থানীয় যুবককে একই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাওয়া গেছে, হামিদ, আব্দুল আহাদ, আবুল বশর বশু, মোস্তাক। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। কারো মাদক, কারো মার্ডার, কারো মারামারিসহ নানা অভিযোগের দায়ে মামলা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে মাদক কারবার চলে এই সীমান্তপথে। সশস্ত্র এসব সিন্ডিকেট মাদক পাচারের পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে এই রমজান আলী ও তার সঙ্গে থাকা কিছু রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে এসব ঘটছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, 'এরা সবাই অস্ত্রধারী সন্ত্রাস। দিনের বেলাতেই তারা খোলাখুলি অস্ত্র দেখায়। সাধারণ মানুষ ভয়ে কিছু বলতে পারে না। তাদের আশ্রয় প্রশয় দাতা হিসেবে ছৈয়দুল বশর 'ছি ছি'সহ আরও অনেকেই গোপনে নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।'
অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া, ধামনখালী ও রহমতেরবিলসহ সীমান্তের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে মাদক পাচার চলছে। নতুন ও পুরাতন চক্র মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই এই সিন্ডিকেটগুলো দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং পাচারকারীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে।
উখিয়ার সীমান্তে দায়িত্বে থাকা ৬৪-বিজিবির অধিনায়ক লে কর্ণেল জসীম উদ্দিন বলেছেন, 'সীমান্তে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। অনেক সময় কারবারিরা কৌশলে পালিয়ে গেলেও মাদক পাচার চালান জব্দ করছে বিজিবির সদস্যরা। সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার রাখা হয়েছে।'
মাদকবিরোধী অভিযানে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারের লক্ষ্য, যত বড় শক্তিশালী সিন্ডিকেটই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় না দিয়ে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা।
এইচএ