টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার নঙ্গিনাবাড়ী ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেবেন্দ্র মণ্ডল ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় ভীষণ আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে তিনি শিখেছিলেন আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, সাহস এবং জীবনের প্রতি দায়িত্ববোধ। কখনো ভাবতেও পারেননি, একদিন তার জীবন এমন এক কঠিন বাঁকে পৌঁছাবে, যেখানে তিনি হারাবেন পৃথিবী দেখার ক্ষমতা।
ফুটবল খেলতে গিয়ে একদিন গুরুতর চোখে আঘাত পান দেবেন্দ্র। প্রথমদিকে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা উন্নতি হলেও সময়ের সঙ্গে চোখের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান “চোখ আর আগের মতো হবে না।” যেকোনো মানুষের জন্য এটি ছিল ভয়াবহ খবর। কিন্তু দেবেন্দ্র ভেঙে পড়েননি। বরং জীবন ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ তাকে আরও শক্ত করেছে।
দৃষ্টি হারানোর পরও তিনি জীবনের চাকা থামিয়ে রাখেননি। নিজের বাসার সামনে, পারা মহল্লায় একটি ছোট চায়ের দোকান চালিয়ে আসছেন তিনি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চা বানানো, অর্ডার দেওয়া, কাপ ধরানো সবই তিনি করেন শুধুমাত্র অনুভূতি ও স্পর্শের ওপর নির্ভর করে। অন্ধত্ব তাকে দুর্বল করেনি; বরং তিনি হয়েছেন আরও দৃঢ় ও আত্মনির্ভর।
দেবেন্দ্রের স্ত্রীসহ দুই সন্তান রয়েছে। পরিবারের ভালো থাকা এবং সন্তানদের ভবিষ্যতই তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। তিনি বলেন,“আমি কোনো সাহায্য চাই না। যা পারি, তা-ই করি। আমার সন্তানদের জন্যই এগিয়ে চলতে হয়। জীবনকে থামিয়ে রাখা যায় না।”
দেবেন্দ্রের এই সংগ্রামী জীবন স্থানীয় মানুষের মধ্যেও অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। তারা বলেন,“চোখে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতিদিন দোকান চালান। তার অধ্যবসায় আমাদের সবার জন্য উদাহরণ। তিনি দেখিয়েছেন, অন্ধকারও পরাজিত হয় যখন মানুষের মনোবল দৃঢ় থাকে।”
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তার এই অদম্য মনোবলকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন,“দেবেন্দ্র মণ্ডলের অদম্য জীবনযুদ্ধ সত্যিই প্রেরণাদায়ক। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও তিনি শ্রম ও ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে তার মতো সংগ্রামী মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। প্রয়োজন হলে সরকারি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহায়তা করবো।”
দেবেন্দ্র মণ্ডলের জীবন আমাদের শেখায় দৃষ্টি হারালেও মানুষ হারায় না স্বপ্ন, সাহস কিংবা আত্মনির্ভরতার শক্তি। অন্ধকারের মাঝেও ইতিবাচক আলো ধরে রাখার অদম্য ইচ্ছাশক্তি মানুষকে সবসময় সামনে এগিয়ে যেতে শেখায়। তার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের কোনো বাধাই স্থায়ী নয় যদি মানুষের মনোবল অটুট থাকে।
এসআর