চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মনোনয়ন পাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী মীর আরশাদুল হক। একই সঙ্গে তিনি দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিবসহ সব পদ থেকে পদত্যাগের কথাও জানিয়েছেন।
দলটির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর জোটবদ্ধ হওয়ার গুঞ্জনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মীর আরশাদুল হক তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, তিনি এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব, নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীসহ সব দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই মুহূর্ত থেকে এনসিপির সঙ্গে তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর এনসিপি ১২৫ আসনে প্রার্থীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে বাঁশখালী আসনে মীর আরশাদুল হকের নাম চূড়ান্ত করা হয়। ওই সময় কেন্দ্রীয় নেতা ইমন সৈয়দসহ আরও কয়েকজন এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে তাঁর ছবি সংবলিত পোস্ট শেয়ার করে তিনি লিখেছিলেন, ‘এনসিপি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, কিন্তু বটের আক্রমণ থেকে মুক্তি দেয়নি! দেখা যাক, কী হয়…।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়ন পাওয়ার পরও মীর আরশাদুল হক নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে ছিলেন না। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সমালোচনা করে আসছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে যাচ্ছে এমন খবর প্রকাশের পরই মীর আরশাদুল হক দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে এনসিপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে মীর আরশাদুল হক লিখেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, দল ও দলের নেতারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। দল ভুল পথে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভুল পথে আমি চলতে পারি না।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে মীর আরশাদুল হক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটিতেই তিনি এই ঘোষণা দিলেন। তিনি লিখেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কোনো বিকল্প নেই। তারেক রহমানের ‘স্মার্ট অ্যাপ্রোচ’ এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে তাঁর ‘ক্লিয়ার ভিশন’ তাঁকে আকৃষ্ট করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে তিনি আরও অভিযোগ করেন, অস্থিরতা তৈরি করা, ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির একটি প্রবণতা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সখ্যর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।
মীর আরশাদুল হক দক্ষিণ বাঁশখালীর নাপোড়া গ্রামের মীরপাড়ার মীর মজিবুল হকের ছেলে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মীর আরশাদুল হক সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, আমার স্ট্যাটাসে পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি। এটাই আমার বক্তব্য।
এসআর