দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর দেশের মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি দেশের মাটিতে পা রাখেন।
ইতিহাস বলে, রাজনীতিতে সময় সবকিছুর উত্তর দিয়ে দেয়। তারেক রহমানের বেলায় এই কথাটি যেন সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। একদিন তিনি পাহাড়সম অভিযোগ মাথায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে এবং দীর্ঘদিন নির্বাসনে ছিলেন। দেড় যুগ পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তিনি দেশের মাটিতে ফিরে আসলেন আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে, গণমানুষের নেতা আর জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে।
এদিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ফ্লাইট নং বিজি-২০২ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে রওনা হয়ে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী উড়োজাহাজটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে কিছু সময় যাত্রাবিরতি নিয়ে বেলা ১১টা ১২ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
তারেক রহমানের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে একই বিমানে তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানও এসেছেন। সঙ্গে রয়েছে তার আদরের পোষা বিড়াল ‘জেবু’।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন অভিযোগ এনে তার নামে মামলা করা হয়। এরপর প্রায় ১৮ মাস কারাবন্দী ছিলেন তারেক রহমান। মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে চলে যান তারেক রহমান। সে বছরের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে আসার পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায় তার। একের পর এক মামলায় জর্জরিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা হয়নি আর। অবশেষে দীর্ঘ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল। প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরলেন তারেক রহমান।
বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রথমে ফুল দিয়ে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একে একে আলিঙ্গন করেন। এ ছাড়া উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি।
পরে তারেক রহমানকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন তার শাশুড়ি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান এবং দেশে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা।
বিমানবন্দর থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যখন তারেক রহমান বাইরে আসেন, তখন রাস্তার পাশে সারি সারি গাঁদা ফুলে সজ্জিত ছোট্ট বাগান দেখে মন হয়তো আঁকুপাঁকু করছিল তার।
তাৎক্ষনিক পাদুকা খুলে তারেক রহমান পা রাখেন সবুজ ঘাসে। হাতে নিলেন এক মুঠো মাটি। তার চোখে মুখে তখন বয়ে যাচ্ছিল যেন আনন্দের ঝর্ণাধারা!
অপেক্ষা তখনই ভীষণ আনন্দের, যদি হয় জমকালো প্রত্যাবর্তন। অপেক্ষা তখনই হয় প্রবল সতেজ, যদি জনস্রোতের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া যায়। পায়ের তলে, হাতের মুঠোয় মাটির স্পর্শ লাগে। দেশের মাটি ও মানুষ তখন হয়তো আপনাকে বলে দেয়, অপেক্ষা শুদ্ধতম ভালোবাসার প্রকাশ।
সেখানে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যা একজন মা দেখেন। অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন মানুষ নিরাপদে ঘর থেকে বের হতে পারে ও ঘরে ফিরে আসতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের ঐতিহাসিক ভাষণের সূত্র টেনে তিনি বলেন, ‘মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন–আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম (আমার একটি স্বপ্ন আছে)। তেমনি আজ আমিও বলছি–আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান (আমার একটি পরিকল্পনা আছে)।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তারেক রহমান তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলীর মোড় হয়ে গুলশান-২ নম্বরে বাসভবনে চলে যান।