এইমাত্র
  • গণ অধিকার থেকে পদত্যাগ করছেন রাশেদ খান
  • হাদি হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের
  • খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে
  • এবার রাশেদ খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
  • ঢাকার গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট
  • স্মৃতিসৌধের পথে তারেক রহমান
  • উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত শাহবাগ না ছাড়ার ঘোষণা
  • কম্বোডিয়ায় ৪০ বোমা ফেলল থাইল্যান্ড
  • অনুদানের হিসাব প্রকাশ করলেন তাসনিম জারা
  • ইমন ঝড়ে বড় পুঁজি সিলেটের
  • আজ শুক্রবার, ১২ পৌষ, ১৪৩২ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ঠিকাদারের অর্থায়নে বিদেশ সফর নিষিদ্ধ, তবু যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ৩ কর্মকর্তা

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম

    ঠিকাদারের অর্থায়নে বিদেশ সফর নিষিদ্ধ, তবু যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ৩ কর্মকর্তা

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম

    সরকারি নির্দেশনা স্পষ্ট, ঠিকাদার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বিদেশ সফর পরিহার করতে হবে। চলতি বছরের ৬ এপ্রিল এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও সংস্থাকে সতর্ক করা হয়। তবু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চট্টগ্রাম ওয়াসার তিন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন, এমন তথ্য সামনে আসায় প্রশাসনিক শুদ্ধতা ও নীতিনৈতিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

    ডিজিটাল পানি মিটার সরবরাহ, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ–সংক্রান্ত ‘কারিগরি ও সফটওয়্যার প্রশিক্ষণ’-এর কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। সফরকারীদের মধ্যে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামার লুৎফি জাহান। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন প্রতিনিধি। আগামী সোমবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। সফরের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ দিন।

    বিদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। তিনি সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, এই সফরের প্রক্রিয়া অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে এবং এতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন রয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এ সফরে সরকারের বা চট্টগ্রাম ওয়াসার কোনো অর্থ ব্যয় হচ্ছে না; ডিজিটাল মিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করছে।

    তবে এখানেই মূল বিতর্ক। সরকারি পরিপত্রে যেসব সফর নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঠিকাদার-নির্ভর সফরের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব, স্বার্থের সংঘাত এবং প্রশাসনিক পক্ষপাতের সুযোগ বন্ধ করা। অথচ ওয়াসার এই সফরের ব্যয় বহন করছে সরাসরি সেই প্রতিষ্ঠান, যারা সংস্থাটির একটি বড় প্রকল্পের ঠিকাদার।

    তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম ওয়াসা ৩ হাজার ডিজিটাল পানি মিটার কেনার উদ্যোগ অনুমোদন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে মিটার স্থাপন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংস্থাটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয় এবং শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মিটার স্থাপনের কাজ শেষ হয়। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মিটার সরবরাহের দায়িত্বে ছিল ‘উইংস ইনভেস্টমেন্ট এলএলসি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

    প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন এমন কর্মকর্তাদের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সরাসরি ডিজিটাল মিটার স্থাপন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন না। তবু তাঁকে এই সফরের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এর আগেও তিনি ২০২২ সালের জুলাই মাসে অন্য একটি প্রকল্পের যন্ত্রপাতি কেনার আগে শিল্পকারখানা পরিদর্শনের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন এবং সফর শেষে পানি জীবাণুমুক্তকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার দাবি করা হয়।

    এবারের সফর প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম বলেন, ডিজিটাল মিটার স্থাপন ও পরিচালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তিনি এই সফরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

    চট্টগ্রাম ওয়াসায় কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ইতিহাস নতুন নয়। প্রায় প্রতিটি বড় প্রকল্পেই বিদেশ সফর একটি নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে উগান্ডা সফর নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় ওয়াসার ২৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ‘প্রশিক্ষণের’ নামে পূর্ব-মধ্য আফ্রিকার দরিদ্র দেশ উগান্ডা সফর করেন। তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের আরও ১৪ জন কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন। ওই সফর নিয়ে ওয়াসা বোর্ডের একাধিক সদস্যই প্রকাশ্যে আপত্তি তুলেছিলেন। গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলেও এর পরও বিদেশ সফরের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি।

    সুশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকাদারের অর্থায়নে বিদেশ সফর প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পরিপন্থী। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পক্ষপাত, ভবিষ্যৎ ক্রয় বা প্রকল্প অনুমোদনে প্রভাব বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি হয়। সরকারি পরিপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল এসব ঝুঁকি নিরসন করা। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্দেশনা কতটা মানা হচ্ছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার এই সফর তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

    এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। সরকারি নির্দেশনা জারির পর এমন সফর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না, আর হয়ে থাকলে তা কোন যুক্তিতে, সে প্রশ্নের জবাবও খুঁজছে সংশ্লিষ্ট মহল।

    সরকারি নীতিমালা, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা এবং ঠিকাদার-নির্ভর বিদেশ সফরের এই সমন্বয় চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রশাসনিক শুদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

    এফএস

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…