বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর স্থাপনা তাজমহল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তিনি দাবি করেছেন, তাজমহল আসলে একটি মন্দির ছিল, পরে মুঘল সম্রাট শাহজাহান সেটিকে সমাধিতে রূপ দেন। তার এমন দাবি ঘিরে ভারতে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়িয়েছে, সামাজিকমাধ্যমেও দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ৬৯ বছর বয়সী এই নেতা সাগর জেলার বিণা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন। তার দাবি, প্রথমে মুমতাজ মহলকে বুরহানপুরে দাফন করা হয়। পরে তার মরদেহ এমন এক স্থানে নেয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণের কাজ চলছিল— এরপর সেখানে গড়ে ওঠে তাজমহল।
তার বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়। মুহূর্তেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে তীব্র ও বিভক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিজয়বর্গীয়র সমর্থকেরা সামাজিকমাধ্যমে বিষয়টিকে ‘ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা’ বলে তুলে ধরলেও সমালোচকেরা তার এই মন্তব্যটিকে উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেছেন।
একই অনুষ্ঠানে বিহারের মানুষদের নিয়ে আরেক মন্তব্যও করেন তিনি। বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারের কারও বিনয়ী হওয়া বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি নীতিন নবীন বিনয়ের সঙ্গে এগিয়েছেন। এই মন্তব্যও অনলাইনে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে, কেউ একে স্বাভাবিক রাজনৈতিক মন্তব্য বলেছেন, আবার কেউ একে অনুপযুক্ত ও আপত্তিকর বলছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, কয়েক দিন আগেই আরেক মন্তব্যের কারণে সমালোচনায় পড়েছিলেন বিজয়বর্গীয়। ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেটার হয়রানির অভিযোগের পর তিনি বলেন, খেলোয়াড়দের ‘শিক্ষা নেয়া’ উচিত এবং চলাফেরা সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো প্রয়োজন। সমালোচকেরা বলেন, এই মন্তব্যে পুলিশের ভূমিকা ও ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা প্রশ্নটি আড়ালে পড়ে যায়।
এদিকে বিজয়বর্গীয়র সাম্প্রতিক মন্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, যথাযথ ভূমিকা না পাওয়ার হতাশা থেকেই এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্য করে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করছেন অনেকে।
বিহার নিয়ে করা মন্তব্য প্রসঙ্গে গুপ্ত প্রশ্ন তোলেন, যদি এমনই দৃষ্টিভঙ্গি হয়, তবে বিজেপি কেন সেখানে জোরালোভাবে প্রচার চালাল এবং নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট করল? তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, বিজেপির কয়েকজন মন্ত্রী চাইলে নতুন ইতিহাস বই লিখতে পারেন। তার ভাষায়, ‘কেউ বলেন, ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি; কেউ বলেন, মুমতাজকে বুরহানপুরে দাফন করা হয়েছিল। তাহলে তারা বই লিখে সারা দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেখুক—মানুষ কী ভাবছে।
অবশ্য বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য আগে থেকেই পরিচিত কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি নারীদের পোশাক ও নৈতিকতা নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হন। তিনি বলেছেন, খুব ছোট পোশাক তার ভালো লাগে না এবং সেলফি তুলতে এলে মেয়েদের ‘উপযুক্ত পোশাক’ পরে আসা উচিত।
এর আগে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াংকা গান্ধীর আচরণকে তিনি ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ২০২২ সালে হনুমান জয়ন্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে নারীর পোশাককে পৌরাণিক চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করে ক্ষোভের জন্ম দেন। তিনি আরও বলেন, নারীদের শালীন পোশাকেই সুন্দর দেখায় এবং আধুনিক আচরণ মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ইঙ্গিত দেয়। তার এসব মন্তব্য বহুবারই নারীবিদ্বেষী ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে।
এফএস