মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না সুন্নিজনতা— এমন ঘোষণা দিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে ইসলামী ভাবধারার অনুসারী সংগঠনগুলোতে।
রবিবার (৪ মে) ‘মার্চ টু গাজীপুর’ এবং সোমবার (৫ মে) দেশজুড়ে সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ও ছাত্রসেনা।
ঢাকা নগরের সাবেক ছাত্রসেনা সভাপতি ও আহলে সুন্নাতের কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা রইস উদ্দিনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভে ফুঁসছে ধর্মীয় অঙ্গন। শনিবার (৩ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। সেখানে বক্তারা রইস হত্যাকে ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের কো-চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মুফতি মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মাস্টার আবুল হোসাইন ও সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম।
বক্তব্যে আহলে সুন্নাতের চেয়ারম্যান আল্লামা কাজী মঈনউদ্দিন আশরাফী বলেন, “বৈষম্য ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার ও সুশাসনের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার বিচার যেমন হয়নি, তেমনি এবার রইস উদ্দিনকেও মিথ্যা অপবাদে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা জানতে চাই, কার নির্দেশে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না? এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে পরিস্থিতির দায় সরকার ও প্রশাসনকেই নিতে হবে।”
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নির্বাহী মহাসচিব মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, “২৬ এপ্রিল আমরা নতুন মেরুদণ্ড প্রতিস্থাপন করেছি— যেটা ‘মেইড ইন কারবালা’। এই মেরুদণ্ড ভাঙবে না, মচকাবে না। একজন ইমামের ইজ্জত রক্ষার জন্য, একজন সন্তাহারা মায়ের আহাজারির সুবিচারের জন্য, একজন বিধবার স্বামীর হত্যার বিচারের জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। সুবিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরছি না।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশের আচরণ আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যাত্রাবাড়ি থানার আগের আচরণের প্রতিচ্ছবি আমরা আজ গাজীপুরের পুবাইল থানা পুলিশের মধ্যেও দেখতে পাচ্ছি। সরকারকে বলবো— এই পুলিশদের জন্য নতুন পাঠশালা দরকার।”
সমাবেশে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জয়নুল আবেদিন জুবাইর বলেন, “মাওলানা রইস উদ্দিন একজন সম্মানিত ইমাম ও খতিব। তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে, তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না সুন্নিপন্থীরা।”
পীর আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলা, পীর অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন, মুহাদ্দিস আশরাফুজ্জামান আলকাদেরী, অ্যাডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, পীরজাদা আবদুল করিম কুতুবী, এম সোলাইমান ফরিদ, পীরজাদা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আমিরী, আল্লামা শাহ নূর মোহাম্মদ আলকাদেরী, মুফতি কামাল উদ্দীন আজহারী, অধ্যাপক সাইফুদ্দিন খালেদ, মাওলানা হাফেজ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, অ্যাডভোকেট মোখতার আহমদ ছিদ্দিকী প্রমুখ।
বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই, তবে নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপসহীন। বারবার বিচারহীনতার শিকার হওয়া সুন্নি পীর-মাশায়েখদের হত্যার বিচার না হলে, আমরা রাজপথেই রক্তের বিনিময়ে সুবিচার আদায় করবো ইনশাআল্লাহ।”
দেশের ধর্মপ্রাণ সুন্নিজনতা ও আলেম সমাজের প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, এই আন্দোলন শুধুমাত্র একজন রইস উদ্দিনের নয়, বরং শত শত নির্যাতিত-নিহত আলেমের সুবিচারের প্রতীক। এখন প্রয়োজন সুপরিকল্পিত ন্যায়বিচার, নয়তো সামনে আরেকটি ‘জুলাই বিপ্লব’ এড়ানো যাবে না।
এনআই