ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নতুন বেসরকারি কলেজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেন্ট্রাল কলেজ। এর অনুমোদিত ঠিকানা শহরের ভাদুঘর এলাকায়। কিন্তু বাস্তবে ক্লাস চলছে শহরের কলেজপাড়ায়, যা মূল ঠিকানা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা সরাসরি লঙ্ঘন করে বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি নেওয়া হয়েছে, অভিযোগ উঠেছে।
জেলার সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ মার্চ পৌর ভূমি কার্যালয়ে ‘ভূমির অখণ্ডতা সনদ’ চেয়ে আবেদন করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাহাদাত সরকার, যিনি নিজেকে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি বিএস ৭২৯৪ দাগে ৯০ শতক এবং বিএস ৭৩২২ দাগে ১০ শতক জমি কলেজের নামে দানপত্র দলিলের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছে।
পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে দেখা যায়, জমিগুলো সদর উপজেলার ভাদুঘর মৌজায়, অখণ্ড ও বিরোধমুক্ত। এর ভিত্তিতে ‘ভূমির অখণ্ডতা সনদ’ ইস্যু হয়। এই নথি জমা দিয়েই কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ভাদুঘরে কলেজ স্থাপনের প্রাথমিক অনুমতি দেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ভাদুঘরের জমিতে কোনো একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়নি। পরিবর্তে সাহাদাত সরকার ও তার লোকজন শহরের কলেজপাড়ায় সরকারি কলেজের পেছনে একটি ভাড়া বাসায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করেছেন। এখানেই চলছে ভর্তি কার্যক্রম, লিফলেট বিতরণ ও পাঠদান।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা ২০২২-এর ৬(৪)(ক) ও (খ) ধারা অনুযায়ী—প্রস্তাবিত জমি ও স্থাপনা সরেজমিন পরিদর্শনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া নীতিমালার ৬(৮) ধারায় স্পষ্ট বলা আছে। কিন্তু এই নীতিমালা পাশ কাটিয়েই সেন্ট্রাল কলেজ ভাড়া বাসায় কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
গত এপ্রিল মাসে কলেজপাড়ার এক বাসিন্দা লিখিত অভিযোগ করেন, এখানে কোনো স্থায়ী অবকাঠামো ছাড়াই কলেজের কার্যক্রম চলছে, যা নীতিমালার পরিপন্থী। অভিযোগের ভিত্তিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদাত সরকারকে ২৩ এপ্রিল শুনানিতে হাজির হতে বলেন। শুনানিতে সাহাদাত সরকার ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবেন না’ এ মর্মে মুচলেকা দেন।
কলেজপাড়ার বাসিন্দা কয়েকজন বলেন, একটি কলেজ থেকে আরেকটি কলেজের দূরত্ব দুই থেকে তিন কিলোমিটার হওয়ার কথা। অথচ সরকারি কলেজের পেছনেই ভাড়া বাড়িতেই এর কার্যক্রম চলছে।
তারা দাবি করেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামালের মাধ্যমে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করেই এই অনুমতি আদায় করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, এ ধরনের অনিয়ম শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও বিভ্রান্ত করে।
শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে রাজি হননি।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা একাডেমি সুপারভাইজার পাপিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে অবগত নই। আমার অফিসে এমন কোন তথ্য আসেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমনটা করার কোন অধিকার নাই। আমরা এই বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত রয়েছি এবং তদন্ত করছি। দ্রুতই আমি এটা নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো। যদি তারা সত্যিই এটা করে থাকে তাহলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এই বিষয়ে জানতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামসুল আলমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। তাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এআই