চট্টগ্রামের খুলশী থানায় গত ২৩ নভেম্বর কথিত এস্কেভেটর অপারেটর হাসান নামের একজন ব্যক্তি একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৮ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে শাহীনসহ ১০ জন হাসানের পথরোধ করে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় পরদিন তার এস্কেভেটরটি গ্যারেজ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে মামলাটি সাজানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে গতকাল (৪ ডিসেম্বর) একটি পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন স্বৈরাচারবিরোধী জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাত্রদল নেতা এবং ‘গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা’ মো. শাহীন।
শাহীন অভিযোগে উল্লেখ করেন, মামলায় আসামি করা মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে মাইকেল বায়েজিদ থানার একটি মামলায় ২ নভেম্বর আটক হয়ে কারাগারে ছিলেন। তিনি জামিন পান ২৫ নভেম্বর এবং কারাগার থেকে বের হন ২৬ নভেম্বর। তাহলে কারাবন্দি অবস্থায় তিনি কীভাবে ১৮ নভেম্বর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, এই প্রশ্ন তুলেছেন শাহীন। তার দাবি, এটি প্রমাণ করে যে মামলাটি সাজানো।
এছাড়া মামলায় উল্লেখিত ঘটনার স্থান ও সময় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শাহীন। তিনি জানান, ১৮ নভেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসান থানায় মামলা করার তিন দিন আগে, ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে ঘটনাস্থল দেখানো হয়, বায়েজিদ থানাধীন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সামনে। কিন্তু থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ঘটনাস্থল সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় একটি মসজিদের সামনে।
"একই দিন, একই সময়, একটি ঘটনা কীভাবে দুই ভিন্ন স্থানে ঘটতে পারে?", এমন প্রশ্ন তুলে তিনি অভিযোগ করেন, এটি মামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে যৌক্তিক সন্দেহ তৈরি করছে।
ঘটনার পর স্থানীয় একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত সেপ্টেম্বর শাহীন ও তার সহযোগীরা টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছেন। একটি সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করা হয়। তবে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে শাহীন বা তার পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই।
শাহীন বলেন, “ভিডিওর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি সাজানো কাহিনি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। আমি চাই, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের মোবাইল লোকেশন, কললিস্ট ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তদন্ত করা হোক।”
অভিযোগে উঠে আসে, মামলার বাদী নিজেকে এস্কেভেটর মালিক দাবি করলেও প্রকৃত মালিক চন্দনাইশের টিপু কুমার নাথের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে মো. রাসেল নামে এক ব্যক্তির নামে। আর বাদী হাসান সেখানে কেবল সাক্ষী।
শাহীনের দাবি, হাসান কোনো নিরীহ অপারেটর নন। বরং পাহাড় দখল, রাতের আঁধারে পাহাড় কাটা এবং ভূমিদস্যুতার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত একটি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অস্ত্র, বিস্ফোরক, হত্যা, চাঁদাবাজি এবং ভূমি দখলের একাধিক মামলা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে সীতাকুণ্ড, জঙ্গল সলিমপুর ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি সশস্ত্র গ্রুপ পাহাড় নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা যায়। প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে প্রবেশ করলে হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের দাবি, এই অপরাধচক্রের সঙ্গেই বাদী হাসানের যোগসূত্র রয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, শাহীন ও তার ভাই ফাহিম, দুজনই জুলাই আন্দোলনের ‘গেজেটভুক্ত যোদ্ধা’। যদিও ফাহিম কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন, তবুও তাকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ফাহিম বলেন, “এই মামলা শুধু আমাকে নয়, পুরো জুলাই আন্দোলনকেই কলুষিত করার অংশ। আমাকে এলাকা ছাড়া করা, ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার থামিয়ে দেওয়া এবং রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার অপচেষ্টা চলছে।”
মো. শাহীন বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, মামলার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং ডিজিটাল ফরেনসিক–ভিত্তিক তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি’র একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সময়ের কন্ঠস্বরের সাথে আলাপ কালে শাহীন অভিযোগ করেন, একটি পরিকল্পিত চক্র, সাজানো মামলা, বিভ্রান্তিকর সংবাদ এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে তাকে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এবং এর পেছনে রয়েছে অপরাধীচক্র, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং প্রশাসনিক প্রভাবে পরিচালিত একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে বহদ্দারহাটে গুলিবিদ্ধ হন শাহীন। সে সময়কার ভিডিও, ছবি ও সংবাদ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। আন্দোলনের পর তাকে ‘গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং সরকারি ভাতাও চালু হয়।
শাহীনের ভাষায়, “যেদিন থেকে আমাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো, সেদিন থেকেই আমার বিরুদ্ধে মনগড়া গল্প, সাজানো অভিযোগ ও মিথ্যা মামলার ষড়যন্ত্র শুরু হয়।”
এসআর