ময়মনসিংহের গৌরীপুরে হিল্লা বিয়ের নামে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক নারী। পরকীয়া প্রেমিকাকে ঘরে তুলতে তার স্বামী এমন ঘটনা সাজিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। তারপরও সংসার টিকিয়ে রাখতে মৌখিক তালাকের শুদ্ধতা জন্য স্বামীর ভগ্নিপতির সঙ্গে হিল্লা বিয়েতেও রাজি হন এ নারী। পাওনা টাকা ফেরতের নামে কাজির বিরুদ্ধে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়াসহ এসব ঘটনায় বুধবার (১০ ডিসেম্বর) থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত চলছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগীর স্বামী আব্দুল কাদির জানান ভিন্ন বক্তব্য। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্ত্রীকে বৈধভাবেই গত ১৫ নভেম্বর তালাক দেই। তবে বড় ছেলে জয়নাল আবেদিনকে শনিবার স্কুল থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। সে (ভুক্তভোগী নারী) যেহেতু চলে গেছে! তার দিন সে দেখেছে। আমিও শনিবার নতুন বিয়ে করেছি। ছেলেকে অপহরণের ঘটনায় মামলা করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার সন্তানকে জিম্মি করে তার মায়ের নিকট থেকে স্বাক্ষর নিয়েছি, এ অভিযোগও সত্য না।’
ভুক্তভোগী নারী জানান, ২০১৫ সনে উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের দত্তবাড়ি গ্রামের আবুল হাকিমের ছেলে আব্দুল কাদিরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে জয়নাল আবেদিন (৮) ও ওয়াসকুরনি (১৮মাসের) নামের দুই ছেলে রয়েছে। প্রায় এক বছর যাবত অন্য এক মহিলার সঙ্গে তার স্বামীর পরিকিয়া প্রেম চলছিলো। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে সালিশ হয়ে এ থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতিও দেয় সে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪মাস পূর্বে তাকে মৌখিকভাবে তালাক দেয় তার স্বামী। রাগান্বিত ও ক্ষুব্দ হয়ে এ তালাক দেওয়ায় তা সঠিক না হওয়ায় স্বামীর গৃহে বসবাস করেন। আরও নির্যাতন-নিপীড়ন করায় এক পর্যায়ে পিত্রালয়ে চলে আসেন। তবে তার বড় ভাই ও স্বজনদের নিকট থেকে আনা ধারকর্জের ১৩লাখ টাকা তার স্বামীর নিকট থেকে যায়।
তিনি আরও জানান, এরপরে স্বামীর ভগ্নিপতি রঞ্জু মিয়া ও তার স্ত্রী আমাকে বুঝায় যে, ‘মৌখিক তালাকটা শুদ্ধ করতে হলে একটি রেজিস্ট্রি তালাকনামা করতে হবে এবং তোমার হিল্লা বিয়ে বসতে হবে।’ তার স্বামীও একই কথা বলে, ‘তুমি একটা স্বাক্ষর দিয়ে, দুলাভাইকে হিল্লা বিয়ে করো। তারপরে তোমাকে আবার ঘরে তুলে আনবো।’
ওই নারী বলেন, ‘এরপরে আমার সন্তানকে ভিডিও কলে রেখে জানায়, স্বাক্ষর দাও, না হলে ছেলের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এতেও রাজি না হওয়ায় স্বামীর নিকট পাওনা টাকা নেয়ার জন্য কল দেই গৌরীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি (বিবাহনিবন্ধনকারী) মো. হুজাইাকে। ওই কাজির কথা মোতাবেক কাজি অফিসে আসলে আমার স্বামী আমাকে জানায়, সে ৮লাখ টাকা পাবে। এরমধ্যে নগদে ৩লাখ ৯০হাজার টাকা দেন। স্বাক্ষর দিয়ে নিতে হবে বলে কাজি জানায়। কাজির কথায় আমি দুইবার দু’টি স্বাক্ষর দেই। পরে জানতে পারি টাকা দেওয়ার কথা বলে কাজি তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়েছে।’
অচিন্তপুর ইউনিয়নের খালিজুড়ী গ্রামের রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘আমার শ্যালক আব্দুল কাদির গিয়ে বলেছে রাগে যেহেতু তার স্ত্রীকে ৩বার তালাক বলেছে ফেলছে, সে জন্য তার বউকে বুঝাতে সে যেনো আমাকে (রঞ্জু) হিল্লা বিয়ে করে এবং একটি স্বাক্ষর (তালাকনামায়) দেয়। কাজি হুজাইফাও তখন বলেছে আপনি হিল্লা বিয়ে করে তাকে নষ্ট (শারীরিক সম্পর্ক) করলে সহি-শুদ্ধ হবে। তারপরে আমি আবার তাকে রেজিস্ট্রি করে কাদিরের নিকট বিয়ে পরিয়ে দিবো। তালাকের নামে ওর (বুক্তভোগী নারী) সঙ্গে প্রতারণা করেছে কাজি হুজাইফা ও শ্যালক আব্দুল কাদির।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন আব্দুল কাদিরের বড় ভাই মতিউর রহমান। তিনি জানান, তার ছোট ভাইকে কয়েকবার বুঝিয়েছেন। কিন্তু সে ওই মহিলাকে বিয়ে করতেই এই মেয়ের সঙ্গে ছলচাতুরী করেছে। তিনি বলেন, ‘কোলে দু’টি সন্তান রেখে তাকে যাতে বাড়ি থেকে বের করে দিতে না পারে, সে জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। মিথ্যা কথা বলে স্বাক্ষর নেওয়া উচিত হয়নি।’
‘স্বাক্ষর দিয়ে এসে সব পাওনা টাকা নিয়ে যাও’-ভুক্তভোগী নারীকে এ ফোন দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন গৌরীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি মো. হুজাইফা। তিনি জানান, প্রথমবার যখন তালাকনামায় স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিলো। তখন সেটা সঠিক হয়নি। এরপর কাদির বলছিলো, স্বাক্ষর দিয়ে ওর পাওনা টাকা নিয়ে যাক। ‘সে জন্য আমি তাকে কল দিয়েছিলাম’- বলে কাজি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল ও ছেলে-মেয়ের বাড়ি আমার নির্ধারিত এলাকায় নয়। তবে উভয়পক্ষ মিলে অফিসে আসলে তখন সেটা করা যায়। আমার উপরে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। তালাকনামা যখন হয়েছিলো তখন উভয়পক্ষের লোকজন ছিলো। শুধু তাকে ফোন করে আসতে বলাটা আমার ঠিক হয়নি।’
এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইখা