চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১৬টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে একজন নারী প্রার্থীও আছেন, যা চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াত ঘোষিত তালিকায় অনুপস্থিত ছিল। ফলে নির্বাচন শুরুর আগেই নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করল নতুন উদীয়মান এই রাজনৈতিক দলটি।
রাজধানীর বাংলামোটরে দলীয় অস্থায়ী কার্যালয়ে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি প্রথম ধাপে সারা দেশে ১২৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। একইসঙ্গে তিন পার্বত্য জেলার প্রার্থীও প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে খাগড়াছড়ি আসনে একজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা মিলে মোট ২৩টি আসনের বিপরীতে এনসিপি এবার ১৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা গণমাধ্যমকে জানান, সারা দেশ থেকে দেড় হাজারেরও বেশি ব্যক্তি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনে গড়ে ৭ থেকে ৮ জন করে ফরম নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম–৯ আসনে সর্বোচ্চ ১২ জন আবেদন করেন।
চট্টগ্রামের ঘোষিত ৯ আসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। রাউজান থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন জিলানী। চট্টগ্রাম–৮ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক মো. জোবাইরুল হাসান আরিফ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ পরিচালনা করে আসছেন। কোতোয়ালী–বাকলিয়া আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মো. রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী সিন্টু, যিনি ২০০৫ ও ২০১০ সালে সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং সম্প্রতি এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম–১০ আসনে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা মনোনয়ন পেয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এনসিপির একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন। বন্দর–পতেঙ্গা–ডবলমুরিং আসনে প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ আজাদ দোভাষ, যিনি অতীতে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আনোয়ারা–কর্ণফুলী আসনে কেন্দ্রীয় সদস্য জুবাইরুল আলম মানিক, চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক আসনে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ হাসান আলী, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া আসনে আবদুল মাবুদ সৈয়দ এবং বাঁশখালী আসনে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তিন পার্বত্য জেলাতেও এনসিপি প্রার্থী দিয়েছে, খাগড়াছড়িতে কেন্দ্রীয় সংগঠক অ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা, রাঙামাটিতে প্রিয় চাকমা এবং বান্দরবানে মংসা প্রু চৌধুরী। কক্সবাজারের চার আসনের মধ্যে তিনটি, কক্সবাজার–১, ২ ও ৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রার্থীদের কেউ কেউ অতীত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সামাজিক পরিচিতি নিয়ে নতুনভাবে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম–৯ আসনের প্রার্থী রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, তিনি সম্প্রতি এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন এবং তার পরিবার অতীতে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। চট্টগ্রাম–১১ আসনের প্রার্থী আজাদ দোভাষ বলেন, পূর্ববর্তী রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে চান তিনি। সাতকানিয়া–লোহাগাড়ার প্রার্থী আবদুল মাবুদ সৈয়দ দীর্ঘদিন নাগরিক ঐক্যের জাতীয় কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানো, সংগঠন শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধানে অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম–৮ আসনে প্রার্থী জোবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে দৃঢ় সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে এবং বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক পরিচালনা করছেন তারা। রাউজানের প্রার্থী মহিউদ্দিন জিলানী শহীদ জুলাই স্মরণ করে স্থানীয় মানুষের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন। বাঁশখালীর প্রার্থী মীর আরশাদুল হক বলেন, এলাকার রাস্তাঘাট ও স্বাস্থ্যসেবার সংকট নিরসনকে তিনি নিজের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন।
চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াতের ঘোষিত তালিকায় কোনো নারী না থাকলেও এনসিপির তালিকায় দুই নারী প্রার্থী, সাগুফতা বুশরা মিশমা (চট্টগ্রাম–১০) ও মনজিলা সুলতানা (খাগড়াছড়ি) নির্বাচনী অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, উদীয়মান দলটি সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলেও নারী নেতৃত্বে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে, যা সাধারণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারে।
চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শক্ত অবস্থানে থাকলেও নতুন প্রজন্ম ও বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থানে এনসিপির উপস্থিতি এবার উল্লেখযোগ্য। ৯টি আসনে তাদের দৃঢ় প্রস্তুতি, কয়েকজন পরিচিত মুখের যুক্ত হওয়া এবং নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহণ, সব মিলিয়ে দলটি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দৃশ্যমান অবস্থান তৈরি করেছে।
এসআর