বিজয় দিবসকে সামনে রেখে যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা মৌসুমের প্রথম বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন। চাহিদা বাড়ায় তারা আসন্ন ইংরেজি নববর্ষের বাজার নিয়েও আশাবাদী। এভাবে দাম থাকলে চলতি বছর লাভবান হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন তারা। চাষি নেতারা বলছেন, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের ফুল চাষিরা প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন।
গত কয়েক মাসের পরিশ্রমে গদখালীর মাঠগুলোতে ফুটেছে গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা সহ বিভিন্ন প্রকারের ফুল। মৌসুমের প্রথম বাজারে চাষিরা ফুলের ভালো দাম পেয়েছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) গোলাপ প্রতি পিস ৫-৭ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস কালার ভেদে ৬-১৪ টাকা, জারবেরা ৮-১২ টাকা, রজনীগন্ধা ৫-৭ টাকা, একশ’ পিস চন্দ্রমল্লিকা ২০০-৩০০ টাকায় এবং এক হাজার হলুদ গাঁদা ৪০০ ও বাসন্তি কালারের গাঁদা ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চাষিদের মতে, গত কয়েক মাস ধরে ফুলের বাজার ভালো যাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে দাম আরও বাড়ার আশা রয়েছে। বিশেষ করে আসন্ন ইংরেজি নববর্ষের বাজার নিয়েও আশাবাদী। আজিজুর রহমান নামের এক ফুল চাষি বলেন, ‘বাজারের অবস্থা গত বছরের তুলনায় খুবই ভালো। সব ধরনের ফুলের দাম সন্তোষজনক। পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত এই দাম অব্যাহত থাকলে আগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
চাষি জালাল উদ্দিন জানান, ‘এবার জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস ও চন্দ্রমল্লিকা চাষ করেছি। গত এক মাস ধরে ফুলের দাম ভালো আছে। সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়বে। যদি এই উর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে, উৎপাদন খরচ উঠে যাবে এবং লাভও হবে।’
আরেক চাষি আব্দুল মঈন বলেন, ‘৪০০ গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছি। দাম ৫ টাকা প্রতি পিস বলা হয়েছে, কিন্তু আমি আরও একটু বেশি আশা করছি। সামনে বিজয় দিবস এবং আসন্ন শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) থেকে দাম বাড়বে। আশা করছি, এই দাম বাড়ার ধারা পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। চলতি বছর আমরা ফুল বিক্রি করে লাভবান হতে পারব।’
গালিব হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘চলতি বছর গরম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দাম স্থিতিশীল রয়েছে। গোলাপের দাম ৫ টাকার নিচে নামেনি। অন্যান্য ফুলের দামও সমানভাবে আছে। প্রতিদিন ফুলের দাম বাড়ছে। তবে মাঠে ফুলের ধরন কমে গেছে। আগে ১ বিঘা গোলাপ বাগান থেকে ২৫০০-২৬০০ ফুল পাওয়া যেত, এখন সেটা কমে ৫০০-৬০০ এ দাঁড়িয়েছে। চাহিদার তুলনায় যোগান কম হওয়ায় আমরা দাম একটু বেশি পাচ্ছি। সার ও কীটনাশকের দাম যদি নাগালের মধ্যে থাকতো, তবে একটু স্বস্তি পেতাম।’
ফুলের বাজার মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীরাও সন্তুষ্ট। সোহরাব নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা চাষিদের কাছ থেকে ফুল কিনে বিভিন্ন জেলায় বিক্রেতাদের কাছে পাঠাই। চলতি বছর শুরু থেকেই ফুলের দাম একটু বেশি। আমরা ক্রয়মূল্য থেকে সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করি। এছাড়া ভোক্তা পর্যায়ে দাম অতিরিক্ত না হয়, সেদিকেও নজর রাখি। এই মাত্রায় যে লাভ হচ্ছে তাতে আমি সন্তুষ্ট।’
রিপন হোসেন নামে অপর এক ব্যবসায়ী জানান, ‘ফুলের দাম মানের ওপর নির্ভর করে। বাজারে পর্যাপ্ত ফুল রয়েছে এবং চাহিদাও ভালো। ফলে বাজার এখন ভালো যাচ্ছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন, এতে আমাদেরও খুশি। চাষি ভালো থাকলে ব্যবসায়ীরাও ভালো থাকবেন।’
এদিকে, গদখালী ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ফুলের দাম সন্তোষজনক। চাহিদা ও বাজার দর চাষিদের জন্য অনুকূলে রয়েছে। আমাদের প্রায় পাঁচ হাজার ফুল চাষি আছেন। তারা প্রত্যেকে যদি বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অন্তত দশ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন, তাহলে পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা যাবে। তবে আমি আশাবাদী, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে এর চেয়েও বেশি টাকার ফুল বিক্রি করবে এ অঞ্চলের চাষিরা।”
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যশোরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা ১৩ ধরনের ফুল চাষ করেন।
এইচএ