পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলাচরের কৃষক মিল্টন গাজী (৪২)। তার নিজের কোন জমি নাই। প্রতি বছর অন্যের জমি নিয়ে চাষাবাদ করে যে ফসল পান তা দিয়েই মেটাতে হয় সারা বছরের খোরাক।
জমি কেনা থেকে শুরু করে চাষাবাদ পর্যন্ত মিল্টন গাজীর যে খরচ হয় তা তিনি মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে করেন। ফসল ঘরে তুলে বছরের খোরাক রেখে বাকি ধান বিক্রির পর তিনি ঋণের টাকা সুদে-আসলে পরিশোধ করেন।
এ বছর মিল্টন গাজীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। এবার তিনি ৮০ কড়া (স্থানীয় মাপে এক কানি) জমিতে ইরিশান্ত জাতের ধান চাষ করেছেন। একসনা জমি কিনেছেন ৪০ হাজার টাকায়। ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ, বীজ বপন, চারা রোপন, ও শ্রমিকের বেতনসহ মাড়াই নিয়ে মোট ৪০ হাজার টাকা। সার-ওষুধের জন্য তার ব্যয় হয়েছে আরও ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার জমিতে এবছর বিনিয়োগ হয়েছে মোট ৯০ হাজার টাকা। এরপর প্রতিমন ধান খেত থেকে হাট পর্যন্ত পরিবহন খরচ ৩০ টাকা। মোট ব্যায় ৯২ হাজার ৬৪০ টাকা।
এবছর মিল্টন গাজীর ৮০কড়া জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৮৫মন। বাজারে বর্তমানে প্রতি মন (৪৯কেজি) ধান বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকা। এতে সর্ব সাকুল্যে লাভ হয় ৫হাজার ১১০ টাকা। এ লাভে খোরাকি রাখা তো দূরের কথা, ধান বিক্রির পর মহাজনের সুদসহ দেনা পরিশোধ করতে মিল্টন গাজীকে পরিশোধ করতে হয়েছে গাঁট থেকে।
এত কষ্টের পর স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে এখন সেই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়েছে মিল্টন গাজীর। কেবল মিল্টন গাজীই নয় উপজেলার অধিকাংশ কৃষক এবছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের সূর্যমনি গ্রামের কৃষক জয়নাল গাজী (৬২)। তিনি কালাইয়া সোমবারের ধান হাটে ৭০মন ধান নিয়ে আসছে বিক্রির জন্য। বিক্রি শেষে সময়ের কণ্ঠস্বর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ২০০ কড়া জমিতে তিনি ধান চাষ করেছেন। প্রাথমিক ভাবে ৭০মন ধান বাজারে বিক্রি করতে আসছেন। কিন্তু বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে উৎপাদন খরচের হিসাব মিলাতে গেলে লাভের পরিমান নাই বললেই চলে। কারণ একসনা জমির দাম, শ্রমিকের মজুরি, সার-বীজ-কিটনাশক সব কিছু উর্দ্ধগতি। কিন্তু ধানের বাজার সেই অনুপাতে বাড়েনি। তাই কৃষক যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পেতে পারে তার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান।
কালাইয়া বন্দর ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর ধানের দাম একই আছে। কিন্তু এবছর কামলার মজুরি, জমির মূল্য ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশী হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ধান চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। যাতে উৎপাদন লক্ষ মাত্রা ৯০ হাজার মেট্রিকটন ধান। আমরা সব সময়ই চাই, কৃষক যাতে তার কষ্টের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়। তারপড়েও সার-বীজসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ সহজলোভ্য হয় সে বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএম