জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিবেশবান্ধব ও ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণার মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং পরিবেশকর্মী ওমর ফারুক শ্রাবন।
দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসা ওমর ফারুক বর্তমানে G17 UAC Bangladesh-এর ক্যাম্পাস ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে তিনি জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (BYLC)-এর অধীনে ১৭ দিনব্যাপী ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক একটি প্রকল্প সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে তার নিজস্ব একটি সংগঠনও রয়েছে।
জকসু নির্বাচনে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে আমি দীর্ঘদিন কাজ করছি। জকসুর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম পেলে শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ আরও বড় পরিসরে করা সম্ভব।’
নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি সম্পূর্ণরূপে পোস্টার ও লিফলেট বর্জন করেছেন। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে সবজির বীজ বিতরণ করছেন, যা ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা তার এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
পোস্টার বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পোস্টার পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ। প্লা-কার্ডের মাধ্যমে সহজেই বার্তা পৌঁছানো যায় এবং এতে পরিবেশের ক্ষতিও হয় না।’
তার নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের জীবনমান ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ায় মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে দক্ষ শেফ নিয়োগ এবং ভর্তুকির ব্যবস্থা করা; প্রতিটি ওয়াশরুমে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, টিস্যু ও সাবান নিশ্চিত করতে প্রত্যেক ফ্লোরে ক্লিনার নিয়োগ; এবং ‘নাপা সেন্টার’ খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকায়ন করা।
এছাড়া মেডিকেল সেন্টারে ব্লাড গ্রুপিং ও সিবিসি টেস্ট, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার র্যাপিড টেস্ট চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। মেয়েদের জন্য টিটি ও সারভিক্স ভ্যাকসিন এবং ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিয়মিত ত্রৈমাসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজনের কথাও রয়েছে তার ইশতেহারে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২ ডিসেম্বর জকসুর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমিকম্প আতঙ্কে ছুটি ও অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তের পর ৪ ডিসেম্বর নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে নির্বাচনী প্রচারণা। ভোটগ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর। ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা করা হবে ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৭২৫। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সংসদের ২১টি পদের বিপরীতে চারটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ১৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হল সংসদ নির্বাচনে ১৩টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ৩৩ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন সমর্থিত ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’, ছাত্রদল ও ছাত্রঅধিকার সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’, ছাত্রশক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল অংশ নিচ্ছে। হল সংসদে ‘রোকেয়া পরিষদ’সহ বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন।
এসএম