কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১৩টি লোহার সিন্দুক আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে খোলা হচ্ছে।
এর আগে, গত ৩০ আগস্ট সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন ৩২ বস্তা টাকা পাওয়া যায়, আর গণনা শেষে তখন রেকর্ড ভেঙে এক অভাবনীয় অঙ্ক—১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা সংগ্রহ হয়েছিল! এ ছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে। প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টায় ৫০০ জনের একটি দল এই টাকা গণনার কাজে অংশগ্রহণ করে।
এবারের বিশেষত্ব হলো, দীর্ঘ সময়—প্রায় ৩ মাস ২৭ দিন পর খোলা হচ্ছে এই সিন্দুকগুলো। সাধারণত প্রতি তিন মাস অন্তর সিন্দুক খোলা হলেও এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতির কারণে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
পাগলা মসজিদে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসুল্লিরা আসেন দান করতে। বিশেষ করে ধর্মীয় যে কোনো প্রোগ্রামে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আর এমন সময়গুলোতে পাগলা মসজিদের প্রতি মুসল্লিদের দানের ঝোঁক থাকে চোখে পড়ার মতো। ফলে এবার অনেকেই আশা করছেন, আগের সব রেকর্ড পেছনে ফেলতে চলেছে এবারের দান।
সকালে দানসিন্দুক খোলার সময় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য, ব্যাংক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। গণনার কাজে নিয়োজিত থাকার কথা রয়েছে প্রায় ৫০০ জন।
উল্লেখ্য, পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হয় মসজিদের উন্নয়ন, গরিব ও অসহায়দের সাহায্য, মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনাসহ নানাবিধ কল্যাণমূলক কাজে।
পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রথমে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হলেও বর্তমানে এটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির ওপর বিস্তৃত। তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে রয়েছে একটি সুউচ্চ মিনার, যা পাঁচতলা ভবনের সমান উচ্চতা বিশিষ্ট এবং দূর থেকেও দৃশ্যমান।
এখানে একসঙ্গে ৬ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এবং নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক নামাজের জায়গা।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও দান করেন।
বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
মসজিদ কমপ্লেক্স সম্প্রসারণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এই নতুন কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন এবং থাকবে ২০০টি গাড়ির পার্কিং সুবিধা।
এবি