ইরানজুড়ে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। মুদ্রার রেকর্ড পতন, লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ ইরানিরা। রাজধানী তেহরানের বাজার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ তৃতীয় দিনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির বহু শহরে। দোকানিদের ধর্মঘট, সড়কে বিক্ষোভ ও সরকারবিরোধী স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করলেও উত্তেজনা এখনও কাটেনি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মুদ্রামান ধস ও মূল্যস্ফীতির প্রতিবাদে ইরানে টানা তৃতীয় দিনে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়েছে তেহরান থেকে শুরু করে আরও কয়েকটি শহরে। গত রোববার তেহরানের গ্র্যান্ড বাজারে দোকানিদের ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানি রিয়ালের রেকর্ড পতনের পর তারা ধর্মঘটের এ সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর থেকে বিবিসি পারসিয়ানের যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে— কারাজ, হামেদান, কেশম, মালার্দ, ইসফাহান, কেরমানশাহ, শিরাজ ও ইয়াজদ শহরে মানুষ বিক্ষোভ করছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। ইরানি সরকার বলেছে, তারা বিক্ষোভের বিষয়টি ‘স্বীকার করে’ এবং ‘কঠোর ভাষা হলেও ধৈর্য ধরে শুনবে’।
গত সোমবার রাতে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিক্ষোভকারীদের ‘প্রতিনিধিদের’ সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন, যাতে সমস্যার সমাধানে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেয়া যায়। একইসঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদরেজা ফারজিনের পদত্যাগও গ্রহণ করেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আব্দোনাসের হেম্মাতিকে নিয়োগ দেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। তারা সরকারবিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু চাই’ বলে স্লোগান দেয়। আর এটি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ির প্রতি ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
কিছু বিক্ষোভকারীর কণ্ঠে প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির ছেলের পক্ষেও স্লোগান শোনা গেছে—‘শাহ দীর্ঘজীবী হোক’। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত রেজা পাহলভি এক্স–এ লিখেছেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাদের জয় হবেই— কারণ আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ’। তিনি আরও বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট চলতেই থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পারসিয়ান ভাষার এক্স অ্যাকাউন্টও বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘সাহসের প্রশংসা করে’ এবং বহু বছরের ব্যর্থ নীতি ও অব্যবস্থাপনার পর যারা মর্যাদা ও ভালো ভবিষ্যৎ চান— ওয়াশিংটন তাদের পাশে আছে।
বিবিসি বলছে, সোমবার ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বৈঠকেও আলোচ্যসূচির শীর্ষে ছিল ইরান। পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানে সরকার পরিবর্তনকে সমর্থন করেন কি না— সে বিষয়ে কিছু বলবেন না। তবে বলেন, ‘তাদের প্রচুর সমস্যা— ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, ভেঙে পড়া অর্থনীতি, মানুষ খুশি নয়’।
তিনি আরও বলেন, ইরান যদি আবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক কর্মসূচি শক্তভাবে গড়তে চায়, তাহলে তিনি ইসরায়েলের আরেক দফা বিমান হামলার পক্ষেও সমর্থন দিতে পারেন। গত জুনে ইরান–ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালায়। ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।
জবাবে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ‘যে কোনও আগ্রাসনের’ জবাব হবে ‘কঠোর ও অনুতাপজনক’। অবশ্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ি আগেও দাবি করেছেন, যুদ্ধের সময় ইসরায়েল চেয়েছিল ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ুক এবং সরকার পতন ঘটুক। সেসময় তিনি বলেন, ‘তারা রাস্তায় অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল... কিন্তু মানুষ শত্রুর উসকানিতে প্রভাবিত হয়নি।’
এবি