এইমাত্র
  • চার বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি আবহাওয়া অফিসের
  • খারকিভে চলছে ‘কঠিন লড়াই’: জেলেনস্কি
  • সবুজবাগে নির্মাণাধীন ভবনের মাচা ভেঙে নিহত ৩ শ্রমিক
  • আবারো চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই
  • চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাইসাইকেল আরোহী নিহত
  • সিরাজগঞ্জে কভার্ডভ্যানে মিলল ২১৬ কেজি গাঁজা, গ্রেপ্তার ২
  • টাঙ্গাইলের ১৬ সরকারি অফিসে ওড়ে না জাতীয় পতাকা
  • ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য
  • নির্বাচন ও বৌদ্ধ পূর্ণিমার ছুটিতে টানা ৫ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
  • জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল
  • আজ শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৭ মে, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    ভিসি-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে, অস্থির কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম
    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

    ভিসি-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে, অস্থির কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

    কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব দিনের পর দিন বাড়ছে। উপাচার্য অপসারণের দাবিতে কুবির সকল প্রশাসনিক ও একাডেকিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

    শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধনে কুবির উপাচার্যকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি জানান।

    প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, স্বেচ্ছাচারিতা, পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ এনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আর নিজেদের প্রধান কাজ গবেষণা ও উন্নত জার্নালের জন্য প্রকাশনা না করায় শিক্ষকদের প্রতি ক্ষুব্ধ উপাচার্য। নতুন করে যোগ হয়েছে শিক্ষকদের পদান্নতি নীতিমালা, কুবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের ছুটি নিয়ে ভিসি ও শিক্ষকের দ্বন্দ্ব এখন চরমে ।

    এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ১৭ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বিগত ১৯ এপ্রিল উপাচার্যের দপ্তরে তাঁর পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগের ও শিক্ষকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন । এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এদিকে এ ঘটনার কোনো সুরাহা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে পিছপা হবেন না শিক্ষকরা। সব মিলিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

    এদিকে শিক্ষক ও ভিসির চলমান দ্বন্দ্বে নির্দিষ্ট সময় তাদের ক্লাস না হাওয়ায় একাডেমিক সিলেবাস থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া চলমান শিক্ষকদের আন্দোলনে অনেক বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে রাখা হয়েছে।

    কুবির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বলেন, কিছুদিন পর পর শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে না। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। ভিসি স্যার চাইলে তিনি এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন। তিনি এসবের সমাধান কেনো করেন না, তিনি নিজেই ভালো জানেন। আমরা নিয়মিত ক্লাস চাই।

    প্রত্নতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী নূসরাত জাহান বলেন, এমনিতে করোনার কারণে ক্লাস বঞ্চিত হয়েছি। এবার, শিক্ষকদে আন্দোলনের কারণে আমাদের ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে। আমরা এই অস্থিরতা থেকে মুক্তি চাই। আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। এক্ষেত্রে ভিসি স্যার এগিয়ে আসলে সকল সমস্যার সমাধান হবে।

    বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। যোগদানের পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদে জ্যেষ্ঠদের পাশ কাটিয়ে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া, পছন্দের শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে অন্যদের আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে একের পর এক। এমন বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা এবার উপাচার্যের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন।

    কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন ২০২২ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে নিজের বলয় তৈরি করেছেন। এদের বিরুদ্ধে নানা সময় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তাঁরা ভিসিকেও বিপথগামী করছেন বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে সমালোচনার জন্ম দিচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করায় এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করাসহ সবশেষে শিক্ষকদের উপর হামলায় ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ভিসি যোগদানের পর থেকেই একের পর এক নিয়ম ভঙ্গ করে নিয়োগ কাণ্ড ঘটিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক আবদুল মঈন।

    অভিযোগ ওঠে, মার্কেটিং বিভাগের নির্দিষ্ট এক প্রার্থীকে নিতে অভিনব উপায়ে এক অনুবিধি যোগ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন তিনি। অনুবিধিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও আলোচিত না হলেও নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তা প্রকাশ করেন ভিসি। ওই বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করতে শিক্ষকদের মহল থেকে আবেদন গেলেও তিনি তা গ্রাহ্য করেননি। আবেদন যাচাইয়ে অনিয়ম, রাহিদের নিয়োগ পরীক্ষার খাতায় বিশেষ চিহ্ন ব্যবহারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াসহ বিভিন্ন অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের অভিযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওই প্রার্থীকেই নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

    তবে প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষায় এক বোর্ড সদস্য তাকে নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানালেও (নোট অব ডিসেন্ট) সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি। নিয়মানুযায়ী নিয়োগ বোর্ডে কারও বিষয়ে আপত্তি আসলে বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করতে হয়। সিন্ডিকেটে পর্যালোচনা সাপেক্ষে ওই প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্তকরণ হয়।

    তবে ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণকারী একাধিক সদস্য জানান, কোনো প্রার্থীর বিষয়ে আপত্তি সংক্রান্ত কোনো আলোচনাই সিন্ডিকেটে হয়নি। নিয়োগের এজেন্ডা আলোচনায় আসলে এক সদস্য সবকিছু ঠিক আছে কিনা জানতে চান ভিসির কাছে। ভিসি হ্যাঁ সম্মতি দিয়েই ওই আলোচ্যসূচিটি সমাপ্ত করেন। সেই নিয়োগকে বৈধতা দিতে নিয়োগের পর ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালাও পাশ করিয়ে নেন তিনি। সেই আবু ওবায়দা রাহিদ বর্তমানে প্রশাসনের সহকারী প্রক্টর। ভিসিকে ‘শলা-পরামর্শ’ দেওয়া ব্যক্তিদের অন্যতম তিনি।

    আবার নিজ জেলা বরিশালের অন্তত ১০ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এসব নিয়োগে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে।

    কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বৎসর মেয়াদে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে ভিসির। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে এ আইন মানা ভঙ্গ করে নিয়োগ দিয়েছে তিনি। বিধি মোতাবেক পদ দিতে ভিসি বরাবর চিঠিও দিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

    কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের বলেন, একজন ভিসি হয়ে তিনি শিক্ষক গায়ে হাত তুলতে পারে না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এর সাথে সাথে ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষক সমাজ এটা মেনে নিবে না। ওনি (ভিসি) পদত্যাগ না করার পর্যন্ত আমরা এক চুল পরিমাণ আন্দোলন থামাবো না।

    কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে আলোচনায় আসছে না শিক্ষক সমিতি। বিভিন্ন দাবিতে গত বছরের জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত ১৭ জন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…