জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত এ হাসপাতালে প্রাথমিক থেকে চূড়ান্ত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়ে থাকে। দেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় উন্নতি হলেও এখনো সরকারি এই হাসপাতাল রোগীদের একমাত্র ভরসা। যেখানে দেশের ৮০ভাগ রোগীর চিকিৎসা হয়ে থাকে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ছুটে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের পদে পদে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
হাসপাতালে কর্মরত একজন আনসার সদস্য থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয়, নার্স, ডাক্তার, এমনকি উর্ধ্বতন মহলের একাধিক অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পুরো হাসপাতালটি যেন দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। ফলে, স্বেচ্ছাচারিতা, অন্যায়, দুর্নীতি, অনৈতিকতা, অসদাচরণ, অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানে।
গত ২৬ ডিসেম্বর সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিছানাসহ ফ্লোরেও রয়েছে অসংখ্য রোগী। কিছুক্ষণ পরপরই হাসপাতালের বিভিন্ন কেবিনগুলোতে এ্যাই ডিম, এ্যাই শশা, এ্যাই চা-কফি-পান-সিগারেট বলে গলা ফাটিয়ে ছুটে বিকিকিনি করে বেড়াচ্ছেন হকাররেরা। যা বিশ্বের কোনো সরকারি হাসপাতালে আছে বলে মনে হয়না।
'হাসপাতালে হকার প্রবেশের নিয়ম নেই, কিন্ত তিনি কীভাবে প্রবেশ করলেন' এমন প্রশ্নের উত্তরে এক হকার বলেন, হাসপাতালের বড় স্যারদের সহযোগিতায় মাসিক ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে হকারদের এ সুযোগ মিলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী বলেন, গতকাল ভর্তি হয়েছি হাসপাতালে। প্রথমে কোনো সিট নেই বলে আমাকে ফ্লোরে শুয়েই চিকিৎসা নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। তবে একজন আনসার সদস্যের মাধ্যমে ওয়ার্ডবয়কে ৩০০ টাকার বিনিময়ে অবশেষে একটি সিট পেয়েছি।
অপর এক রোগী বলেন, এখানে প্রয়োজনের সময়ে ডাক্তারদের খুঁজেই পাওয়া যায়না। এছাড়া দায়িত্বরত নার্স, ওয়ার্ডবয়দের ডাকলেও কর্ণপাত করেননা। প্রায়শই তারা নানা রকম অসাদাচরণ করেন রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে। চা খাওয়ার অজুহাতে তাদের দাবিকৃত দু'পাঁচশ টাকা সংগোপনে হাতে গুজে দিলেই মেলে সহযোগিতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক রোগীর স্বজন বলেন, ডাক্তারদের দেওয়া পরীক্ষার রিপোর্ট আনতে গেলেও সেখানে সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিতে হয় টাকা। অন্যথায় রিপোর্ট হাতে পাওয়া খুবই কষ্টকর। সিন্ডিকেট বাদ দিয়ে নিজেদের পক্ষে রিপোর্ট সংগ্রহ অসাধ্য ব্যপার।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, হাসপাতালে খাবারের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এছাড়া হাসপাতালটির একাধিক ক্যান্টিনে বেশি দামে খাবার কিনতে রোগী ও স্বজনদের বাধ্য করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রেও খাবারের মান ও সেবা নিয়ে রয়েছে অফুরন্ত অভিযোগ।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহল এ বিষয়টিকে সুনজরে আনলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত, অনিয়ম দূরীকরণসহ হাসপালের জনদূর্ভোগ লাঘব সম্ভব হবে।
তবে এ বিষয়ে জানতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উর্ধ্বতন মহলে একাধিকবার যোগাযোগ করলে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
এমআর/আরআই