এইমাত্র
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসে জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • যেকোনো মূল্যে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে: তারেক রহমান
  • ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক: মেডিকেল বোর্ড
  • হাদির ওপর হামলা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: ইসি মাছউদ
  • সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদান ও জামানতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসির পরিপত্র
  • প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা
  • মেসির নিকট ক্ষমা চাইলেন মমতা ব্যানার্জি
  • আজ শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    অভিযুক্তকে আড়াল করতে পুলিশের অপচেষ্টা, খরুলিয়ায় উত্তাল জনতা

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

    অভিযুক্তকে আড়াল করতে পুলিশের অপচেষ্টা, খরুলিয়ায় উত্তাল জনতা

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

    কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া এলাকার সেই মেধাবী ছাত্রী মোশারফা সুলতানা লাকি হত্যার পর পুরো এলাকা এখন উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জনতার ভাষ্য, এই মৃত্যু কোনো আত্মহত্যা নয় এটি ঠান্ডা মাথায়, পরিকল্পিত একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড। অথচ পুলিশ তা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে হয়রানি করছে, আর আসামিকে রক্ষা করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

    রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় খরুলিয়া বাজারে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, অভিভাবক সবাই রাস্তায় নেমে আসেন। “খুনির বিচার চাই, ঘুষখোর পুলিশ হটাও!” “ঘুষ খেয়ে খুনি বাঁচায়, থানা যেন খুনির মঞ্চ সাজায়!”, “লাশ ঝুলেছে, পুলিশ হাসে এই বিচার কবরের পাশে!” ‘ঘুষখোর পুলিশ হটাও, লাকির হত্যার বিচার চাই’, ‘অভিযুক্তকে বাঁচাতে থানা হয়েছে দুর্নীতির আখড়া’ এমন সব স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাজার এলাকা।

    মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীর চোখমুখ লাল হয়ে উঠেছিল ক্ষোভে। সে চিৎকার করে বলে, আমরা পুলিশের কাছে বিচার চাইতে গিয়েছিলাম, আর তারা আমাদেরই ভয় দেখায়! ওদের কাজ খুনিকে বাঁচানো, আমাদের নয়। ঘুষ খেয়ে খুনি বাঁচানো থানা চাই না আমরা!

    একজন স্থানীয় সমাজকর্মী সরাসরি বলেন, এটা আত্মহত্যা নয়, এটা একটা ঠান্ডা মাথায় করা খুন। পুলিশ এই খুনিদের আড়াল করছে। আর আমরা চুপ করে থাকবো না। এবার যদি বিচার না হয়, তাহলে থানা ঘেরাও করব, মাঠে নামব।

    খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, মেয়ে মরেছে, অথচ খুনি মুক্ত। মামলার জন্য গেলেই পুলিশ বলে ‘তদন্ত চলছে’। এ কেমন তদন্ত? নাটক না বানিয়ে খুনিকে ধরো!

    একজন প্রবীণ স্থানীয় ঈসমাইল কাঁপা গলায় বলেন, এই থানা এখন খুনির আশ্রয়। আর যদি পুলিশের এই ভূমিকা চলতে থাকে, তাহলে আমাদের মেয়েরা আর নিরাপদ নয়। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।

    মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এক শিক্ষার্থী কেঁদে কেঁদে বলেন, আমরা প্রতিদিন একসাথে স্কুলে যেতাম। আজ ও নেই, আর আমরা জানি কেন নেই। কিন্তু পুলিশ কিছুই করছে না। আমাদের কথা যদি না শোনা হয়, আমরা নিজেরাই বিচার আদায় করব।

    স্থানীয়রা বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ আমাদের সঙ্গে ছলচাতুরী করছে। থানায় গেলে মামলা নেয় না, উল্টো আমাদের ভয় দেখায়। এটা কি জনগণের পুলিশ, না খুনি রক্ষাকারী বাহিনী?

    অভিভাবক লায়লা খাতুন ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, আমার মেয়ে বলে, সে আর স্কুলে যাবে না। লাকির মতো তারও কিছু হয়ে যেতে পারে! আমরা কি এই বাংলাদেশ চাই? যেখানে হত্যাকারী বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আর পুলিশ টাকা নিয়ে চুপ থাকে?

    স্থানীয় শিক্ষকরা বলেন, লাকি শুধু একজন ছাত্রী নয়, সে ছিল সম্ভাবনার প্রতীক। আজ তাকে হত্যা করা হয়েছে, আর পুলিশ প্রহসনের নাটক করছে। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই এখনই।

    এদিকে, প্রতিবাদকারীদের একাংশ ঘোষণা দিয়েছেন, পুলিশ যদি অবিলম্বে ওসমান গনিকে গ্রেফতার না করে, তাহলে আমরা সড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচিতে যাব। আমরা জানি, লাকির মতো মেয়েরা শুধু আত্মহত্যা করে না তাদের মেরে ফেলা হয়, আর তারপর পুলিশ সেটাকে আত্মহত্যা সাজায়!

    প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাতে পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় লাকির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনা স্থলে বাড়ির দরজা-জানালা খোলা ছিল, যা আরও বেশি করে প্রশ্ন তোলে—এটা কীভাবে আত্মহত্যা হয়? পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, লাকিকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়, আর এরপর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়।

    নিহতের পরিবার জানায়, সৌদি প্রবাসী জাফর আলমের ছেলে ওসমান গনি বাবু (২৫) লাকির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং পরে গোপনে বিয়েও করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। ধারণা করা হচ্ছে, লাকি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন—যা হয়তো এই নির্মম হত্যার পেছনে অন্যতম কারণ।

    এই ঘটনায় এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। মামলাও নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। বরং থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ গ্রহণের স্পষ্ট অভিযোগ। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরিবর্তে পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকায়। কক্সবাজার জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জনতা।

    মানববন্ধনে অংশ নেওয়া জনতা বলেন, আজ খরুলিয়ায় শুধুই কান্না নয়—এখন সেখানে ক্ষোভ, ঘৃণা আর প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে। লাকির মৃত্যু শুধু তার পরিবারের নয়, এটি পুরো সমাজের একটি ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। তবে মানুষ জেগেছে—এবং এবার তারা চুপ থাকবে না।

    তাদের দাবি ‘অবিলম্বে ওসমান গনিকে গ্রেফতার করতে হবে এবং লাকির পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, ‘আজ যদি লাকির বিচার না হয়, তাহলে কাল আরেকটা লাকি মরবে। আর পুলিশের নাটক চলতেই থাকবে।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…