এইমাত্র
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • যেকোনো মূল্যে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে: তারেক রহমান
  • ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক: মেডিকেল বোর্ড
  • হাদির ওপর হামলা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: ইসি মাছউদ
  • সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদান ও জামানতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসির পরিপত্র
  • প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা
  • মেসির নিকট ক্ষমা চাইলেন মমতা ব্যানার্জি
  • আজ শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ঢাকায় নির্ভরতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আড়তদাররা

    চামড়া আছে, ট্যানারি নেই: চট্টগ্রামে ট্যানারি শিল্পের অস্তিত্ব সংকটে চরম দুরবস্থা

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম

    চামড়া আছে, ট্যানারি নেই: চট্টগ্রামে ট্যানারি শিল্পের অস্তিত্ব সংকটে চরম দুরবস্থা

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম

    শিল্প, বন্দর ও বাণিজ্যের শহর চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে একের পর এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অথচ সম্ভাবনাময় একটি খাত ট্যানারি শিল্প—অবহেলা, দুর্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। স্বাধীনতার পর যেখানে এই অঞ্চলে ২২টি ট্যানারি সক্রিয় ছিল, সেখানে এখন শুধুমাত্র একটি ট্যানারি টিকে আছে। কাঁচামালের সহজলভ্যতা, দক্ষ শ্রমিক, পরিবহন সুবিধা ও অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগের আগ্রহ নেই, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নেই, নেই পরিবেশবান্ধব নীতিগত উদ্যোগ। ফলে একসময়ের সমৃদ্ধ ট্যানারি শিল্প আজ অস্তিত্ব সংকটে।

    স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামে ট্যানারি শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। পোর্ট সুবিধা, জনবল ও কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতা এই শিল্পকে উত্থানের পথে নিয়ে যায়। ৭০-এর দশক থেকে শুরু করে ৯০-এর দশক পর্যন্ত শহরটির বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে ২২টি ট্যানারি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশগত দায়বদ্ধতার অভাব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, সরকারি নজরদারির দুর্বলতা এবং ক্রমাগত আর্থিক লোকসানের ফলে একে একে বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সবকটি ট্যানারি।

    সবশেষ মদিনা ট্যানারি পরিবেশগত জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে কার্যত চট্টগ্রামের ট্যানারি শিল্পের ইতিহাসে একটি করুণ ইতি টানা হয়।

    ১৯৯১ সালে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ‘রিফ লেদার লিমিটেড’ এখন চট্টগ্রামের একমাত্র সক্রিয় ট্যানারি। এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর গড়ে ১–১.৫ লাখ পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে শতভাগ রপ্তানি করে থাকে। অথচ কোরবানির মৌসুমেই চট্টগ্রামে উৎপাদিত কাঁচা চামড়ার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ পিস। অর্থাৎ, রিফ লেদার প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। বাকি ৯০ শতাংশ চামড়া পাঠাতে হয় ঢাকার ট্যানারিগুলোতে, যেগুলোর সংখ্যা প্রায় ১৭০। কিন্তু এখানেই তৈরি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সংকট। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া নেয় বাকিতে, কিন্তু সময়মতো পরিশোধ করে না। অনেকে বছরের পর বছর লেনদেন ঝুলিয়ে রাখে।

    চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা সময়ের কন্ঠস্বর-কে জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা কেবল একটি স্লিপ দিয়ে চামড়া নেয়, যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। ফলে টাকা না পেলে আড়তদাররা আইনি সহায়তা নিতে পারেন না। এই অনিশ্চয়তায় অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। একসময় যেখানে আড়তদারের সংখ্যা ছিল ২৫০–৩০০ জন, এখন তা কমে এসেছে ২৫–৩০ জনে।

    সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে সময়মতো টাকা না পাওয়ায় অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। আমরা যারা আছি, তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

    সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল কাদের সর্দার বলেন, ‘চামড়া বিক্রির পর টাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মৌখিক চুক্তি দিয়ে ব্যবসা টেকে না। এই ব্যবস্থাপনা না বদলালে চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।’

    চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির তথ্যমতে, বিগত বছরগুলোতে তারা এবং অন্যান্য খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীরা মিলে গড়ে তিন থেকে চার লাখ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন।

    সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল সময়ের কন্ঠস্বর-কে জানান, ‘গত বছর কোরবানির দিনেই প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল, যা পরে গিয়ে দাঁড়ায় তিন লাখ ৬১ হাজার পিসে।’ তিনি বলেন, ‘জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ প্রতি বছর যে পূর্বাভাস দেয়, বাস্তবে তত চামড়া পাই না। মাঠে যারা থাকি, আমরা জানি—চট্টগ্রামে সাধারণত তিন থেকে চার লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়।’

    তিনি আরও জানান, ‘পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, বিবিরহাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি—এই অঞ্চলগুলো ঘুরে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করি আমরা আড়তদারেরা। চলতি বছর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

    কোরবানির আগে প্রতি বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয়। ২০২৪ সালে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০–৫৫ টাকা। কিন্তু আড়তদারেরা জানান, তারা চামড়া কিনেছেন ৩০–৩৫ টাকায়। এতে গুদাম ভাড়া, লবণ, শ্রমিক মজুরি ও পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি পিস চামড়ার বিপরীতে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। এর ওপর ট্যানারিরা অনেক সময় অগ্রহণযোগ্য বা ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া ফিরিয়ে দেয়, ফলে আড়তদারদের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

    চট্টগ্রামে ট্যানারি শিল্প পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা থাকলেও গত ৩৩ বছরে আর একটি ট্যানারিও গড়ে ওঠেনি। অথচ এখানে রয়েছে প্রচুর কাঁচামাল, সহজলভ্য ও দক্ষ শ্রমিক, বিস্তৃত পরিবহন ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত শিল্প জমি ও অবকাঠামো এবং সহজে অর্থায়নের সুযোগ।

    সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামে ট্যানারি স্থাপনে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ এখানে ট্যানারি শিল্প গড়ে উঠলে হাজারো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো।’ তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘সরকার এখনই পদক্ষেপ না নিলে চট্টগ্রামের চামড়া শিল্প একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…