কুমিল্লায় মে মাসে খুন, চুরি, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের মতো অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে কিছু অপরাধ প্রবণতায় সামান্য হলেও কমতির ধারা লক্ষ্য করা গেছে। জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার (১৫ জুন) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, কুমিল্লায় মে মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯টি, যা এর আগের এপ্রিল মাসে ছিল ৮টি। এছাড়া চুরির ঘটনা মে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫টিতে, যা এপ্রিলে ছিল তুলনামূলকভাবে কম। মাদকদ্রব্য চোরাচালান ও জব্দের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে ১৮৬টি মাদকের মামলা হয়েছে, যা এপ্রিল মাসে ছিল ১৪৮টি। একই মাসে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৮টি, যেখানে এপ্রিল মাসে উদ্ধার হয়েছিল ৫টি। এসব তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, কুমিল্লায় মে মাসে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির প্রবণতা ছিল বেশ দৃশ্যমান।
তবে আশার কথা হলো, কিছু অপরাধ প্রবণতায় মে মাসে খানিকটা হ্রাস দেখা গেছে। এপ্রিল মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৫১টি, যা মে মাসে কমে ৩৯টিতে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে চাঁদাবাজির ঘটনায়ও কিছুটা কমতি এসেছে—এপ্রিল মাসে যেখানে ৫টি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিল, মে মাসে সেখানে তা কমে ৩টিতে দাঁড়িয়েছে। ধর্ষণের ঘটনাও তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই ওঠানামা নিয়ে আমাদেরকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। খুন, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা বেড়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এসব প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে।”
সভার শুরুতেই কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশির কুমিল্লা জেলাবাসীকে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে সচেতন করেন। সবাইকে তিনি মাস্ক পড়ার পরামর্শ দেন ও জনসমাগম এলাকায় সচেতন থাকতে ও নিয়মিত হাত ধোঁয়ার পরামর্শ দেন।
সভায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান বলেন, “কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রামমালা গ্রন্থাগারটি গত আট বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দ্রুত এটি চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” এছাড়া তিনি নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ধরেন এবং জেলা সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একইসঙ্গে আসন্ন ঈদুল আযহার কুরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও সিটি কর্পোরেশনের প্রতি প্রশ্ন রাখেন। এসব বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশির এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সচিব যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সভায় আরও আলোচনা হয় শহরের যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামোগত সংকট নিয়ে। এসব বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার আহ্বান জানানো হয় সভায় উপস্থিত বিশিষ্ট নাগরিক ও নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব রাশেদুল হাসানসহ জেলার বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টজন।
জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে সভার শেষ দিকে বলেন, “কুমিল্লা একটি ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভাবনাময় জেলা। এখানে আইনের শাসন বজায় রাখতে হলে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে এবং যাবে।”
এনআই