ঝালকাঠির নলছিটিতে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, নারী নিপীড়ন ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মো. নুরুল্লাহ নামে এক নেতাকে বহিষ্কার করেছে জামায়াতে ইসলামী। বহিষ্কৃত নুরুল্লাহ উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) তাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে এক অপরিচিত নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও কলের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃষ্ণকাঠি এলাকার একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় শিক্ষকতা করার সময় এক ছাত্রের মায়ের (প্রবাসীর স্ত্রী) মোবাইলে নিয়মিত কুপ্রস্তাব পাঠানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
ঘটনা জানাজানি হলে ওই ছাত্রের স্বজনরা নুরুল্লাহকে আটক ও মারধর করেন। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘটনার ভিডিও ও জবানবন্দির কিছু অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবার ভাইরাল হয়ে যায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নুরুল্লাহ নিজেকে কখনো ইসলামিক বক্তা, কখনো সাংবাদিক—এমনকি বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধি হিসেবেও পরিচয় দিতেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘মো. ফিরুজ আলম নুরুল্লাহ’ নামে আরেকটি পরিচয় পাওয়া গেলে একাধিক ভুয়া পরিচয় ব্যবহারের অভিযোগও সামনে আসে।
ঘটনার পর ৩ ডিসেম্বর বরিশালভিত্তিক আঞ্চলিক দৈনিক আমাদের বরিশাল–এর সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নুরুল্লাহকে তাদের রিপোর্টার তালিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এতে তার সাংবাদিক পরিচয়ও আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও উপজেলা জামায়াত যৌথভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে নারী হয়রানি, নৈতিক অসঙ্গতি, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়গুলো প্রমাণিত হলে প্রথমে তার রানাপাশা ইউনিয়ন জামায়াতের আমিরের পদ স্থগিত করা হয়।
ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. ফরিদুল হক জানান, ‘জামায়াতে ইসলামী নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তার পদ স্থগিত করা হয়েছে।’ পরে বিষয়টি আরও বড় আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জামায়াতের দায়িত্বশীলরা জরুরি বৈঠকে নুরুল্লাহকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘অনৈতিক আচরণের অভিযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওর বিষয়টি পর্যালোচনা করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তবে তিনি দাবি করেন, মাদরাসাকেন্দ্রিক কিছু ব্যক্তিগত বিবাদের কারণে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটনাগুলো প্রচার করেছে এবং নুরুল্লাহকে মারধর করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাফেজ নুরুল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এফএস