ভারতের বাঁধের কারণে ৩০ বছর ধরে উত্তরের জীবনরেখা বুড়ি তিস্তায় পানি নেই। এর পরও সেখানে সেচ প্রকল্পের নামে খননের কাজ হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা বন্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। এরই প্রতিবাদে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাত গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ মশাল মিছিল করেছে।
শুক্রবার রাতে উপজেলার কুঠিরডাঙ্গায় বুড়ি তিস্তা নদী খনন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের তীব্র প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে এলাকা। মশাল হাতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ কুঠিরডাঙ্গা এলাকা থেকে মিছিল বের করে। পরে বুড়িতিস্তা নদীর পারে অবস্থান নেন। এ সময় তারা সঠিক পরিকল্পনায় নদী খনন চাই, অনিয়মের খনন বন্ধ করো, বুড়ি তিস্তা রক্ষা করো– এমন নানা স্লোগান দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত জরিপ ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিবেচনা না করে যেভাবে খনন কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তা নদীর প্রাকৃতিক রূপ নষ্ট করবে। কৃষিজমি ও বসতি এলাকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। কিছু ব্যক্তির স্বার্থে খনন প্রকল্পটি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। যা থামাতে বাধ্য হয়ে জনগণ রাস্তায় নেমেছে। তারা বলেন, আমরা নদী খননের বিরোধী না। কিন্তু খননটি হতে হবে সঠিক নকশায়। প্রকৃত প্রবাহ ধরে এবং জনগণের মতামত নিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, ২০২৫ সালে ভুয়া একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। নদী খননের নামে তিন ফসলি জমি নষ্ট করতে চাইছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জমির আসল মালিক আমরা। অথচ আমাদের মতামত ছাড়াই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সাত গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দালালরা বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। কেউ আমাদের কথা শুনছে না। ডিসি-এসপি পর্যন্ত এখানে আসেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, ২০১৮ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১১টি মামলায় ৭৫০ জন নিরীহ কৃষকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসী সিভিল মামলা করেছেন। যা আদালতে বিচারাধীন। এর পরও পানি উন্নয়ন বোর্ড যখন তখন লোকবল নিয়ে খনন কাজ শুরু করতে চায়। এর সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নদীতে খনন কাজ করতে দেব না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড তার অধিগ্রহণ করা জায়গায় জলাশয় খনন করছে। এটি পাউবোর বিদ্যমান জলাশয়। যা কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে দখলে রেখে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড মোট এক হাজার ২১৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৬৬৭ একর জায়গায় জলাধার পুনর্খনন করা হবে। এতে কৃষকরা স্বল্পমূল্যে সেচের পানি পাবে এবং এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু কিছু কৃষককে ভুল বুঝিয়ে তাদের আন্দোলনে নামানো হচ্ছে।
এফএস