পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানে না এসে নিয়মিত বেতন উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। বেশির ভাগ সময়ই রংপুরে পরিবারের সঙ্গে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষ নিয়মিত কলেজে উপস্থিত না হয়েও যেদিন কলেজে আসেন সেদিন হাজিরা খাতায় আগের কর্মদিবসে উপস্থিতি দেখিয়ে স্বাক্ষর করেন।
অভিযোগ উপজেলার সোনাহার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। নিজের ইচ্ছেমাফিক কলেজে যাতায়াত করায় পুরো কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নামকাওয়াস্তে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করায় অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যেও স্বেচ্ছাচারিতা দেখা দিয়েছে।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে দুপুর পৌনে ১টায় সরেজমিন কলেজটিতে গেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কলেজ প্রাঙ্গনে রোদে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়। অধ্যক্ষের অফিস পাওয়া যায় তালাবদ্ধ। সাংবাদিকের উপস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়েন উপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারীরা। আটজন শিক্ষক ও সাতজন কর্মচারীর এই কলেজে ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানান উপস্থিত শিক্ষকরা।
কিছু দূর এগিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে দেখা গেল মাত্র ১৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস চলছে। একাদশ শ্রেণীর ক্লাসের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কোন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়নি। উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, ক্লাস শেষ হওয়ায় একাদশ শ্রেণীর সবাই চলে গেছে। যদিও রুটিন অনুযায়ী ১২টা ৪০-১ টা ২০ পর্যন্ত ইংরেজি-১ ও ১টা ২০-২টা পর্যন্ত অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়ে পাঠদান হওয়ার কথা।
অধ্যক্ষ নিয়মিত আসেন কী-না এমন প্রশ্নে উপস্থিত সবাই তা এড়িয়ে যান। আজ আসেননি কেন? -জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কলেজের কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান। পরে শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখানোর অনুরোধ জানালে সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকেন। পুনরায় অনুরোধ জানালে হাজিরা খাতা নিয়ে অধ্যক্ষ ঢাকা গেছেন বলে দাবি করা হয়। আজ কোথায় স্বাক্ষর করেছেন এমন প্রশ্নে একসঙ্গে সবাই বলে উঠেন, 'আজ স্বাক্ষর করেননি কেউই'।
কলেজের এমন চিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। সোনাহার বাজারের ব্যবসায়ী তরিকুল বলেন, ‘কলেজটিতে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি খুবই কম থাকে। বছরের শুরুতে শুধু একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি শিক্ষকদের প্রধান টার্গেট। এরপর সারা বছর কলেজ নিয়মমাফিক না চলে শিক্ষকদের মর্জিমাফিক চলে।’
নূরুর বাজার এলাকার মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষকদের যেটুকু উপস্থিতি তার পুরোটাই মাস শেষে বেতনের আশায়। কলেজে যেমন শিক্ষার্থী সংকট আছে তেমনি শিক্ষার মানও যাচ্ছেতাই।’
অধ্যক্ষ আতিকুর রহামান কলেজে নিয়মিত উপস্থিত না হওয়ার পেছনে পারিবারিক কারণকে দায়ী করেছে একটি সূত্র। অধ্যক্ষের বড় মেয়ে আসফি নীলফামারীর সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেনীতে পড়েন। মেজ মেয়ে ছোটন রংপুর ক্যাডেট কোচিং এ পড়েন। এজন্য রংপুরেই বেশির ভাগ সময় থাকা হয় বলে জানায় সূত্রটি।
এই বিষয়ে অধ্যক্ষ আতিকুর রহমানকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ঢাকা থেকে দেবীগঞ্জে ফিরছেন বলে জানান। এসে এই বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।
কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি যাচাই না করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক নাহিদ হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নজরে এলো। কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে ইউএনও দায়িত্বে আছেন। আমি ওনাকে বিষয়টি জানাবো। সেই সঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যেন এই বিষয়গুলো মনিটরিং এর আওতায় আনেন সেই ব্যাপারেও বলব।’ হাজিরা খাতা ঢাকায় নেওয়ার প্রয়োজন আছে কী-না -এমন প্রশ্নে পরিচালক নাহিদ হাসান বিস্ময় প্রকাশ করেন।
ইখা