ময়মনসিংহের ভালুকায় হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে র্যালি, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বিশেষ দোয়া করা হয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভালুকা পাক হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর (অব.) সুবেদার আফসার উদ্দিন মাত্র একটি রাইফেল ও আট যোদ্ধাকে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি গেরিলা ইউনিট। পরে ভালুকা থানা দখল করে সংগ্রহ করেন প্রায় ১৫টি রাইফেল, এলএমজি ও বিপুল গোলাবারুদ। এই শক্তিকে ভিত্তি করে তিনি প্রায় সাড়ে চার হাজার সদস্যের একটি বাহিনী গড়ে তোলেন, যা পরবর্তীতে এফজে-১১ সেক্টরের ‘আফসার ব্যাটালিয়ন’ নামে পরিচিতি পায়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনায় জানা যায়, রাজৈ ইউনিয়নের পারুলদিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ মেম্বারের কাছ থেকে পাওয়া একটি রাইফেল দিয়ে শুরু হওয়া এই ইউনিট প্রথম গেরিলা ক্যাম্প স্থাপন করে মল্লিকবাড়ি বাজারে। পরে শ্রীপুরের কাউরাইদ থেকে খীরু নদীপথে আসা পাকসেনাদের অস্ত্রবোঝাই নৌকা আটক করে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
২৫ জুন ভাওয়ালিয়া বাজু এলাকায় শিমুলিয়া নদীর তীরে সংঘটিত ত্রিশ ঘণ্টার সরাসরি সংঘর্ষ ছিল ভালুকার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের তিন দিকের আক্রমণে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। পরদিন আকাশ পথ থেকে পাক বাহিনীর হামলার মুখেও মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এই যুদ্ধে মল্লিকবাড়ির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তরুণ যোদ্ধা আব্দুল মান্নান শহীদ হন। আহত হন মজিবর রহমানসহ আরও পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা।
ভালুকার যুদ্ধের খবর সে সময় প্রচারিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও এবং বিবিসিতে। একই সময়ে হানাদারদের সহযোগিতায় রাজাকার-আলবদররা ভালুকা অঞ্চলে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন চালায়। আফসার ব্যাটালিয়নের গড়ে তোলা ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল যুদ্ধজুড়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে আফসার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন এবং মল্লিকবাড়ির আব্দুল মান্নানসহ মোট ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ইখা