ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হাসান ওয়ারিসুল কবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বৃক্ষরোপণ, আর্থিক ব্যয়, প্রতিষ্ঠানের প্রাচীরের দেওয়ালে কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, পুকুরের মাছ বিক্রি, রেজুলেশন ছাড়াই গাছের ডাল কেটে শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ এবং আউটসোর্সিং কর্মী ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ নানা খাতে তিনি অর্থ লোপাট করেছেন। প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই নিজের ইচ্ছামতো এসব অনিয়ম করে আসছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে নির্মিত অধ্যক্ষ কোয়ার্টারটি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও ২০২৪ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। যার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। পাশাপাশি পরিত্যক্ত ঘোষণার প্রক্রিয়া, কারিগরি মূল্যায়ন কিংবা অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্রও প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গাছ লাগানো হয়েছে, যার মধ্যে পেঁপে গাছের সংখ্যা বেশি। টাকার উৎস এবং ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাদের অভিযোগ—দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে গাছ ক্রয়, বরিশাল থেকে শ্রমিক এনে গাছ লাগানো, মাসজুড়ে ডরমিটরিতে তাদের রাখাসহ এসব কাজের ভাউচার প্রদানে অনিয়ম রয়েছে। ব্যয়ের সঠিক কোনো হিসাব প্রকাশ করা হয়নি, যা তদন্ত করলে ধরা পড়বে বলে মনে করেন তারা।
এছাড়া সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল হলেও ইনস্টিটিউটে এখনো আউটসোর্সিং কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ একজন কর্মীর উপস্থিতি, বেতন গ্রহণ ও নিয়োগসংক্রান্ত নথি চাওয়া হলে স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বিআরডিবি ও এটিআই–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশিক্ষণের বরাদ্দ, ব্যয় ও ভাউচার এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বরাদ্দের এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকরা জানান, গত শুক্রবারের এক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে যান, কিন্তু পরে তাদের সকল ব্যয় দেখানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জানান, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে নানা অনিয়ম লক্ষ করা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ব্যবহারিক খাতের টাকায় গাছ লাগানো হলে ব্যবহারিক শিক্ষায় সমস্যার সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি অভিযোগ করেন—ব্যবহারিক ক্লাস না নিয়েও ব্যবহারিকে ফেল করানো হয়েছে। তারা মনে করেন, সঠিক তদন্ত, পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা ও ভাউচার উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হাসান ওয়ারিসুল কবির বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক খাতের টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের গাছ লাগানো হয়েছে। মাছ ধরার বিষয়ে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন এসে জাল টেনে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। তিনি আরও দাবি করেন, প্রতিটি খাতের ব্যয়ের হিসাব নথিভুক্ত রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিনি তা দেখাবেন।
এনআই