এক সময় যে জমিতে সারা বছরই বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হতো। এখন সেখানে জলাবদ্ধতার কারণে কোনো ফসলই চাষ করতে পারছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের চয়ড়া গ্রামের ৫ শতাধিক কৃষক। অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে উপজেলার চয়ড়া আঠারো বিঘার বিলে অন্তত ১ হাজার বিঘা জমিতে শুষ্ক মৌসুমেও জলাবদ্ধ, চাষাবাদ হচ্ছে না জমি গুলো। এই এলাকার কৃষকরা বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরেও পুকুরের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
জানা যায় উধুনিয়া ইউনিয়নের চয়ড়া এই বিলের ১শ একক জমিতে কয়েক ব্যক্তি মিলে পুকুর খনন করেছে ২০২২ সালে। মাঠে আরো যাদের জমি রয়েছে পুকুর খননের জন্য চেয়েছিল কিন্তু কৃষকরা তাদের জমি পুকুর খননের জন্য দিতে অনাগ্রহী হওয়ায় তখন থেকেই বিরোধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক কৃষক। সম্প্রতি প্রতিদিন রাতে বিদ্যুৎ এর নলকূপের মাধ্যমে পুরো মাঠ জুড়ে পানি ছেড়ে দেয় পুকুরের মালিকরা, আর এতে জমি গুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বারবার নিষেধ করা পরেও পাইপের মাধ্যমে পুকুরের পানি মাঠে দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই পানিতে মাঠের অধিকাংশ জমি পানিতে ডুবে গেছে, অনেকের জমি কাদা রয়েছে, আবার কিছু জমিতে কৃষক সরিষা বপন করেছে কিন্তু পুকুরের নলকূপের আকষ্মিক পানি এসে খেত ডুবে যাওয়া নষ্ট হয়ে গেছে ফসল।
চলনবিল অধ্যুষিত এই এলাকার মানুষ কৃষি নির্ভরশীল, তাদের জমি অনাবাদি হওয়াতে জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় কোটি কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। পুকুরের মালিকরা অধিকাংশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াতে ৩ ফসলী জমিতে প্রশাসন কে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে পুকুর খনন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এই এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে নলকূপের পানি বন্ধ করে দেয়, আর এতে পুকুরের মালিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা মামলায় দিয়েছে কৃষকদের নামে। মামলা ভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
চয়ড়ার স্থানীয় কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন তার ৫ বিঘা জমি রয়েছে এরমধ্যে জলাবদ্ধ হয়ে ২ বিঘা অনাবাদি রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন পুকুরের মালিকরা পুরো মাঠের জমি পুকুর খনন করতে চাচ্ছে এজন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। কিছু বললেই মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
একই এলাকার ইকবাল হোসেন নামে কৃষক, তিনি জানান তার ১১ বিঘা জমি এই মাঠে রয়েছে, সবগুলোই অনাবাদি রয়েছে। ফলস আবাদ করতে পারছেন না তিনি। এতে তিনি জীবিকা সংকটে পড়েছে।
তবে এ বিষয়ে পুকুরের মালিকদের এক অংশীদার আবু তালেবের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান চয়ড়া আঠারো বিঘার বিলে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের জন্য অনেক জমি অনাবাদি রয়েছে। কৃষি অফিস থেকে পুকুরের মালিকদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে পুকুর থেকে পানি না ছাড়ার জন্য।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম আরিফ বলেন কৃষকদের অনাবাদি হওয়ার খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে দেখেছেন এবং কৃষকরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
এসআর