বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার তালতলা চত্বরে প্রতিদিন ভোর হলেই দেখা যায় এক অনন্য মানবিক দৃশ্য। সকাল ৬ টার দিকে সেখানে আব্দুল হকের দোকানের সামনে ভিড় জমায় ৮ থেকে ১০ হাজার শালিক পাখি। গাছের ডাল ও বিদ্যুতের খুঁটিতে বসে কিচিরমিচির শব্দে যেন তারা ডাকতে থাকে আব্দুল হক কই?
২০০৭ সাল থেকে টানা ১৮ বছর ধরে নিজের উপার্জনের অর্থ থেকে প্রতিদিন এসব শালিক পাখির খাবারের ব্যবস্থা করে আসছেন আব্দুল হক। কখনো গম, কখনো চাল, ডালভাত, রুটি কিংবা পরোটা- যা থাকে, তা-ই ভাগ করে নেন পাখিদের সঙ্গে। কয়েক কেজি আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে কুচিয়ে দেন শুধুমাত্র শালিকদের জন্য। এতে তার কোনো আর্থিক লাভ নেই, আছে কেবল ভালোবাসা আর মানসিক শান্তি।
স্থানীয়রা জানান , কোনো কারণে একদিন খাবার দিতে না পারলে পাখিরা দোকানের সামনে এসে কিচিরমিচির করে তাকে খুঁজতে থাকে। এলাকাবাসীর মতে, পাখিরাও মানুষকে চিনে আর আব্দুল হকের মতো মানুষ বর্তমান সময়ে খুবই বিরল। প্রতিনিয়ত দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যা। এই ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষজন।
শালিক পাখি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে জানান স্থানীয়রা। তারা ক্ষেতে পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্বাস বলেন, ‘একসময় দীর্ঘদিন আব্দুল হক জেলে থাকায় পাখিদের অস্থির আচরণেই স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল তিনি এলাকায় নেই। যেন মানুষের অনুপস্থিতিতেই প্রকাশ পেয়েছিল পাখিদের সঙ্গে তার গভীর বন্ধনের নিঃশব্দ আর্তনাদ।’ তার মতে, মানবিকতার এমন উদাহরণ বর্তমান সময়ে সত্যিই বিরল।
আব্দুল হক বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে নিজের টাকায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার শালিক পাখিকে খাবার দিচ্ছি। ওরা আমার পরিবারের মতো। আমি না থাকলেও যেন কেউ তাদের অভাব পূরণ করে এটাই চাই।’
পাথরঘাটা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. অরবিন্দ দাস বলেন, ‘আব্দুল হকের এই উদ্যোগ দেখে আমি সত্যিই হতবাক। বর্তমান সময়ে নিজের অর্থে নিয়মিত পাখিদের খাবার দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতে সরকারিভাবে যদি পাখিদের খাবারের কোনো বরাদ্দ আসে, তাহলে তাকে সহযোগিতা করা হবে, যাতে কিছুটা হলেও তিনি এই মহৎ কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন।’
ইখা