দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সুনামগঞ্জের ছাতকেখুন হন উপজেলা যুবলীগ নেতা লায়েক মিয়া। হত্যার ঘটনার চারদিন পর শুক্রবার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ন'টায় নিহতের বড় ভাই আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিকের ভাতিজা পৌর প্যানেল মেয়র, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও জামায়াত নেতাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে৷
এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খান মাঈনুল জাকির।
এদিকে লায়েক হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে ছাতক উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মামলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাতিজা তানভীর রহমান, উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুছ শিবলু, ছাতক পৌরসভার প্যানেল মেয়র তাপস চৌধুরী (লায়েক মিয়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী), যুবলীগ নেতা সাদমান মাহমুদ সানি, সাবেক জামাত নেতা আলা উদ্দিন, আবুল খয়ের টুটুল, তাজ উদ্দিন, মিজান মিয়া, আব্দুল মতিন, শামসুল ইসলাম, মিলন মিয়া, এশাদ আলী, সায়মন, মহসিন ও সৌরভকে আসামি করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, লায়েক মিয়া হত্যার ঘটনায় তার ভাইয়ের দায়ের করা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে (মামলা নম্বর ২৫)। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ৯টার দিকে ছাতক থানা সংলগ্ন গনেশপুর খেয়াঘাটে একটির চায়ের দোকানে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হন উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি লায়েক মিয়া। তিনি ছাতক পৌর শহরের মণ্ডলিভোগ আবাসিক এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।
জানাযায়, জেলার ছাতকে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ন'টার সময় থানা সংলগ্ন সুরমা নদীর গনেশপুর খেয়াঘাটের একটি চা স্টলে বসে চা পান করছিলেন উপজেলা যুবলীগ নেতা লায়েক মিয়া। এসময় লায়েক মিয়াকে অতর্কিত এসে ছুরিকাঘাত করে ছাতক পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ ছাতক উপজেলার আবদুল কদ্দুছ শিপলুসহ তার কয়েকজন সহযোগিরা।
এ ঘটনার পরপর হত্যাকারীরা থানার সামনে দিয়ে দ্রুত সুরমা নদী পাড় হয়ে পালিয়ে যায়। এসময় উপস্থিত লোকজন খুনিদেরকে ধাওয়া করলেও আটক করতে পারেনি।
আরও জানা যায়, ছাতক পৌরশহরের মন্ডলীভোগ এলাকার লাল মসজিদ কমিটি নিয়ে লায়েক মিয়া ও একই গ্রামে তাজ উদ্দিনের ছেলে আবদুল কদ্দুছ শিপলুর পক্ষের মধ্যে পূর্ব বিরোধ চলে আসছিল।
স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় আহত লায়েক মিয়াকে উদ্ধার করে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার অবস্থা অবনতি দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত এরশাদ, তাজউদ্দিনসহ তিনজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে সোপর্দ করেছে।
এর পর বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত লায়েক মিয়ার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ১০ টায় ছাতক উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে মরহুমের জানাযার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।