বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাঙ্গালী নদীর পানি আবারও বেড়েছে। সেই সঙ্গে নদী ভাঙনে চককল্যানী এলাকার অন্তত ১০০ মিটার অংশ নদীতে ধ্বসে গিয়ে রাস্তা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে ৫০টি গ্রামের ফসলী জমি।
চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন-রাত যাপন করছেন এসব গ্রামসহ নদীপাড়ের মানুষ। তবে নদীতে ধ্বসে যাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ পরিদর্শন করে দ্রæত সংস্কার ও মেরামতের আশ^াস দিয়েছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিম। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী, স্থানীয় সুঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জিন্নাহ, ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চককল্যানী, চকধলী, জয়লা জুয়ান, জয়লা আলাদি, জয়নগর, গুয়াগাছিসহ ৫০টি গ্রামের এই বাঁধটিতে ভাঙ্গণ শুরু হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের সহায়তা নিয়ে কৃষক নজরুল ইসলাম তার ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এসময় স্থানীয় বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত দশ বছর ধরেই এই বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুম এলেই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গণ দেখা দেয়। ফলে ইতিমধ্যে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া শেফালী বেগম, রেহেনা বেগম, আব্দুল মজিদ, মহির উদ্দিন, শাহেব আলী, আব্দুল আজিজসহ অন্তত ৫০ জনের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু বাঁধের ভাঙ্গণ রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেননি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তারা। তাই বাঁধটির ভাঙ্গণ অব্যাহত রয়েছে। একই কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান আলী, আব্দুল আলীমসহ একাধিক ভুক্তভোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ১৯৮৭ সালে জেলার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি থেকে শেরপুর উপজেলার সাহেববাড়ী ঘাট পর্যন্ত বাঙালি নদীর পূর্ব তীরে দশ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করেন সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিআইডিপি) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি, মথুরাপুর, গোপালনগর এবং শেরপুর উপজেলার সুঘাট, সীমাবাড়ী ইউনিয়ন ও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ পরিবার প্রতি বছর বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও এই বাঁধের ওপর দিয়ে শেরপুর ও ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি, পেঁচিবাড়ি, বিলকাজুলী, জালশুকা, চাঁনদিয়াড়, কুমিরিয়াডাঙ্গা, ভুবনগাতি, চকধলী, চককল্যানী, গুয়াগাছি, জয়লা-জুয়ান, কল্যাণী, বেলগাছি, জয়নগর, সুঘাট, রুদ্রবাড়িয়া, যুগিগাতি, নাগেশ্বরগাতি ও পাঁচথুপি-সরোয়াসহ ৫০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু বাঁধে ভাঙ্গণ দেখা দেওয়ায় ওইসব গ্রামের সিংহভাগ মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে সমতল ভূমি থেকে পানির স্তর নিচে থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে না। তবে জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত না করলে যেভাবে নদীর পানি বাড়ছে, তাতে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানতে চাইলে সুঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জিন্নাহ বলেন, বাঁধের ভাঙ্গণ ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার খবরটি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা বুধবার ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধটি পরিদর্শন করে দ্রæত সংস্কার ও মেরামত করার আশ^াস দিয়েছেন। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বাঁধ পরিদর্শনে আসা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে বাঁধের অন্তত ১০০ মিটার অংশ নদীতে ধ্বসে গেছে। পাশাপাশি নজরুল ইসলাম নামের একজন কৃষকের বাড়িও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তাই বাঁধের ভাঙ্গণ রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা করাসহ বাস্তুহারাদের পুর্নবাসনের জন্য জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে বাঁধের ধ্বসে যাওয়া অংশ মেরামত করা হবে বলে জানান তিনি।