কুমিল্লা-২ হোমনা ও তিতাস আসনে বিএনপির পথের কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। এবার কি বিদ্রোহী হিসেবে লড়াই করার সুযোগ পাচ্ছেন দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপির নেতারা।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে এটি অন্যতম আলোচিত আসনে পরিণত হয়েছে। এতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশ গ্রহণে ভোটের মাঠ জটিল রূপ নিচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং স্থানীয়ভাবে শক্ত অবস্থানে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হোমনা উপজেলা বর্তমানে মূলত দলীয় দ্বন্দ্ব ভেঙে পড়েছে। হোমনা ও তিতাস দুই উপজেলাতেই বিএনপির প্রথম সারির নেতারা একাধিক ভাগে বিভক্ত। এর প্রভাব পড়বে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে। এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া কুমিল্লা-২ আসনের ভোটারদের কাছে এখনও পুরোপুরি পরিচিত নন এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে নির্বাচনী মাঠে। তিনি মূলত কুমিল্লা-১ আসনের মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা। এই বিষয়টিকে সামনে এনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বহিরাগত ইস্যুতে প্রচারণা জোরদার করেছেন।
অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বিএনপির মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, হোমনায় আমার জায়গা রয়েছে, আমি হোমনার। এ ছাড়াও বিএনপি একটি বড় দল। একটি রাজনৈতিক দলের অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশা করে এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে মনোমালিন্য থাকতে পারে মান অভিমান থাকতে পারে এগুলো থাকবে না। অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীই থাকতে পারে থাকবে। প্রতিযোগিতা না থাকলে তো আর এটার মর্যাদা থাকবে না।
এ দিকে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও হোমনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আজিজুর রহমান মোল্লা। সমর্থন দিয়ে তাদের সঙ্গে রয়েছেন হোমনার আরেক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহিরুল হক জহর। তারা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাক্তন এপিএস ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন খান বলেন, জনগণের দাবিতেই আমি নির্বাচন করছি। কুমিল্লা-২ হোমনা ও তিতাস উপজেলাতেই যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। দল যদি এ আসনের কাউকে মনোনয়ন দিত তাহলে আমরা তাকেই মেনে নিতাম। এই আসনের মানুষ অন্য আসনের অন্য উপজেলার বহিরাগত কাউকে মনোনয়ন দেওয়ায় তা মেনে নিতে পারছে না। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহকারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা বলেন, দীর্ঘদিন মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম আছি। দলের জন্য হামলা মামলার শিকার হয়েছি, দলীয় কোন্দলে সাধারণ মানুষ যেন বঞ্চিত না হয় সেটাই আমার লক্ষ্য।
এই আসনের ভোটাররা বলেন, ১৭ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। এবার আওয়ামী জোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্যও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ধারণা আওয়ামীলীগ সমর্থিত ভোটাররা নিজেদের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে যেতে পারে। আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো প্রার্থী দিলেও বড় ভোট ব্যাংক তেমন নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা প্রতীক) দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম চৌধুরী মাঠে রয়েছেন। সব মিলিয়ে কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপি বর্তমানে কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয় ও আত্মবিশ্বাসী। তবে বিএনপি একটি বড় দল হওয়ায় শেষ মুহূর্তে দলীয় নির্দেশনা ও সমঝোতা ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে পারে।
জানা যায়, এই আসনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন সাম্প্রতিক পুনর্বিন্যাসে হোমনা ও তিতাস উপজেলাকে একত্রিত করে কুমিল্লা-২ এবং মেঘনা উপজেলাকে দাউদকান্দির সঙ্গে যুক্ত করে কুমিল্লা-১ চূড়ান্ত গঠন করে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে, যা এখনও বিচারাধীন। অনেকের মতে এই অনিশ্চয়তা ভোটারদের মধ্যে এখনো বিভ্রান্তি কর রয়েছে।
এসআর