এইমাত্র
  • খালেদা জিয়া বলতেন বিদেশে বন্ধু আছে, প্রভু নেই: নজরুল ইসলাম খান
  • ভিসার বিশেষ অ্যাপয়েন্টমেন্টের অনুরোধ না করার আহ্বান জার্মান দূতাবাসের
  • খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তিন বাহিনী প্রধান
  • একইদিনে খালেদা জিয়ার মৃত্যু এবং নিজের বহিষ্কারকে ‘সংকেতপূর্ণ মনে করেন রুমিন ফারহানা
  • হলফনামায় নিজের আর্থিক অবস্থার বিবরণ দিয়েছেন সারজিস
  • প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ২০২৫-কে বিদায় জানিয়ে নতুন ভোরের অপেক্ষায় বিশ্ব
  • কানায় কানায় পূর্ণ খালেদা জিয়ার জানাজাস্থল
  • রাজনীতির বাইরে ক্রীড়াঙ্গনের খালেদা জিয়া
  • কারওয়ানবাজার-আগারগাঁও থেকে যান চলাচল বন্ধ
  • খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
  • আজ বুধবার, ১৭ পৌষ, ১৪৩২ | ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
    খেলা

    রাজনীতির বাইরে ক্রীড়াঙ্গনের খালেদা জিয়া

    ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
    ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম

    রাজনীতির বাইরে ক্রীড়াঙ্গনের খালেদা জিয়া

    ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম

    খেলাধুলা নিয়ে রাজনীতিবিদদের আগ্রহ সাধারণত আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রম নাম সময়ের এই সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তেমনই এক নাম বেগম খালেদা জিয়া। প্রকাশ্যে খুব বেশি উচ্চারণ না করলেও খেলাধুলার প্রতি তার আগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতার ইতিহাস বহুমাত্রিক।

    পারিবারিকভাবেই খেলাধুলার সঙ্গে এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল খালেদা জিয়ার। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন ক্রীড়ানুরাগী একজন মানুষ। তার উদ্যোগেই প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আন্তর্জাতিক পরিচিতি পায়। একসময় এশিয়ার ফুটবলে এই টুর্নামেন্ট গুরুত্বপূর্ণ আসর হিসেবে বিবেচিত হতো। উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের দল ঢাকায় এসে অংশ নিয়েছে এই প্রতিযোগিতায়।

    খালেদা জিয়া প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই ধারাবাহিকতাকে আরও বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেন। তার সময়েই প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে ইউরোপীয় ফুটবল দল আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ইউরোপের দল ঢাকায় এসে খেলেও যায়। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির আওতায় জার্মান কোচ অটো ফিস্টারকে বাংলাদেশে আনা হয়। তার প্রশিক্ষণে ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতির আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতে।

    ২০০১ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার সময়ে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসে। ২০০৩ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করা হয়। সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে ভারতকে এবং ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজেই। পরে চ্যাম্পিয়ন দলকে তার কার্যালয়ে ডেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

    সংবর্ধনার সময় খেলোয়াড়রা আর্থিক পুরস্কারের দাবি তুললেও খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ভিন্নধর্মী। তিনি খেলোয়াড়দের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দেন। তার বক্তব্য ছিল, খেলোয়াড়রা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনেন, কিন্তু অবসর জীবনে অনেক সময় তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। স্থায়ীভাবে থাকার জায়গা থাকলে সেটি তাদের ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হবে।

    ক্রীড়াঙ্গনে এই সিদ্ধান্ত তখন ব্যাপক প্রশংসা পায়। সাফজয়ী দলের ম্যানেজার ছাঈদ হাসান কানন পরবর্তীতে জানান, অর্থের বদলে দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের দিকটি গুরুত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

    খালেদা জিয়ার ক্রীড়ানুরাগ কেবল ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তিনি তখন বিরোধী দলে থাকলেও জাতীয় ক্রিকেট দলকে সংবর্ধনা দেন।

    বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল সেই সংবর্ধনার স্মৃতিচারণ করে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি ক্রীড়াবিদদের সম্মান জানাতে আগ্রহী ছিলেন।

    ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনালে মোহামেডান ও আবাহনীর ম্যাচে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দেন, খেলার মাঠ ও মঞ্চে রাজনীতি আনা যাবে না। ফলে ভিন্ন রাজনৈতিক মতের ক্রীড়া সংগঠকরাও তার পাশে থেকে পুরস্কার বিতরণে অংশ নেন। ক্রীড়াঙ্গনে এই ঘটনাটি আজও একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

    পারিবারিকভাবেও খেলাধুলার সঙ্গে তার সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। বড় ছেলে তারেক রহমান রাজনীতিতে যুক্ত হলেও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ক্রিকেট উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি মিরপুরে ‘হোম অব ক্রিকেট’ প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অবদান ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃত।

    প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি ফুটবল ফাইনালে খালেদা জিয়া তার নাতনি জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুরস্কার বিতরণে উপস্থিত হন। ট্রফি তুলে দেওয়ার সময় শিশুটির হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দর্শকদের আবেগী করে তোলে। মুহূর্তটি করতালিতে ভরে ওঠে স্টেডিয়াম।

    রাজনীতির কঠিন বাস্তবতার আড়ালে খেলাধুলা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের একটি নীরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ক্ষমতায় থাকুন বা না থাকুন, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্যে তার ভূমিকা ও উপস্থিতি আলাদা করে নজর কাড়ে। বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে সেই অধ্যায় আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

    আরডি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…